top ad image
top ad image
home iconarrow iconমতামত

সাক্ষাৎকার: মোহাম্মদ আলী আরাফাত

মরিশাসে পণ্য রফতানির চেয়ে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বেশি

মরিশাসে পণ্য রফতানির চেয়ে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বেশি
মরিশাসের বালাক্লাভায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী প্রবিন্দ জগনাথের সঙ্গে আলাপরত বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। ছবি: তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়

মাদক পাচার এবং মাদকদ্রব্যের অপব্যবহারবিষয়ক প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে যোগ দিতে গত ২২ এপ্রিল মরিশাস সফর করেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। এ সময় তিনি সেখানে বাংলাদেশের শ্রমবাজার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে মরিশাস সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেন। দেশে ফেরার পর গত সোমবার রাজনীতি ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সফরের অর্জন ও অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেন তিনি।

রাজনীতি ডটকম: মরিশাসে শ্রমবাজারের হালচাল কী দেখলেন বা শুনলেন?

মোহাম্মদ আলী আরাফাত : মরিশাসের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ কম। সেখানে বাংলাদেশের প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। তাদের মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার কোভিডের সময় চলে এসেছেন। তারা ছাড়াও দেশটিতে নতুন করে ২৫ হাজার শ্রমিক যাওয়ার সুযোগ আছে। চাইনিজ বা অন্যান্য দেশের বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের কদর আছে।

রাজনীতি ডটকম: সেখানে শ্রমিকদের বড় সমস্যা কী?

মোহাম্মদ আলী আরাফাত: মরিশাসে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন এবং রিয়া নামে দুটি প্রতিষ্ঠান আছে।‌ এই দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশি শ্রমিকদের দেশে টাকা পাঠাতে খুব কষ্ট হয়। দুই থেকে ছয় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হয় টাকা পাঠাতে। অনেক সময় রাতের বেলায় তাদের লাইনে দাঁড়াতে হয়। সেখানে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকেরা যাতে দ্রুত দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) পাঠাতে পারেন, সে ব্যাপারে মরিশাস সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছি।

রাজনীতি ডটকম: শ্রমিকদের এই সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা কতটুকু?

মোহাম্মদ আলী আরাফাত : বিষয়টি নিয়ে আমি ওদের আইসিটি মন্ত্রী দীপক বালগোবিনের সঙ্গে কথা বলেছি। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ও বাংলাদেশে বিকাশ-নগদের মাঝে একটা প্রতিষ্ঠান আছে ব্লেজ নামে। ব্লেজের সঙ্গেও আমি কথা বলেছি। ব্লেজ বলল, তাদের মরিশাসে গিয়ে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ও রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে হবে।‌

আমি তাদের অনুরোধ করে বললাম, ‘তোমরা যাও, টিম পাঠাও। ওদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়কে আমি অনুরোধ করব। মরিশাসের আইসিটি ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমার হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছে।’ আইসিটি মন্ত্রণালয়কে আমি বলেছি, ‘ব্লেজ যে সমাধান দেবে সেটা আমি তোমাদের কাছে পাঠাব। এমনও যদি হয় ব্লেজের যদি মরিশাসে লাইসেন্স নিতে হয় সেটাও আমি ওদের সরকারকে অনুরোধ করব।’

রাজনীতি ডটকম: মরিশাসে ব্যবসা-বাণিজ্যের কোনও সম্ভাবনা আছে কী?

মোহাম্মদ আলী আরাফাত: মরিশাস এখন সিঙ্গাপুরের মতো আফ্রিকার গেটওয়ে। সেখানে বিনিয়োগের সুযোগ সবচেয়ে বেশি। এটি আফ্রিকার মধ্যে খুব নিরাপদ একটি দেশ এবং আইনী ব্যবস্থা বেশ শক্তিশালী। ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেমটা খুব শক্ত। সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রি খুব ভালো করছে। ওদের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তাই আফ্রিকার মার্কেট ধরার জন্য বেস্ট ডেস্টিনেশন হতে পারে মরিশাস।

রাজনীতি ডটকম: বড় কোনো দেশ সেখানে ব্যবসা করছে?

মোহাম্মদ আলী আরাফাত: চীনা একটি কোম্পানিতে বাংলাদেশের প্রায় ৪০০ শ্রমিক কাজ করেন। ওই কোম্পানির এক কর্মকর্তাকে আমি জিজ্ঞেস করেছি, তোমরা এখানে এসে স্পিনিং মিল তৈরি করেছ কেন? চীনেই তো করতে পারতে।

জবাবে ওরা বলল, তাদের তুলা পেতে সুবিধা হয়। তারা মরিশাসে পণ্য তৈরি করে দেশটির গেটওয়ে ব্যবহারের মাধ্যমে আফ্রিকার দেশগুলোতে তা পাঠাতে পারছে। চীনে তুলাজাত এই পণ্য তৈরি করলে খরচ বেশি হবে।

রাজনীতি ডটকম: বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানি করার সুযোগ আছে?

মোহাম্মদ আলী আরাফাত: বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানি করা একটু কঠিন। তবে বাংলাদেশ থেকে কেউ যদি মরিশাসে গিয়ে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে তাহলে সুবিধা পাবে। বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা যদি মরিশাসে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান তৈরি করে তাহলে ওখান থেকে পুরো অঞ্চলটা পাবে পণ্য রফতানি করার জন্য। এর মাধ্যমে প্রাপ্ত লভ্যাংশ বাংলাদেশেই আসবে।

রাজনীতি ডটকম: কিন্তু বাংলাদেশের আইনি কাঠামো মরিশাসে বিনিয়োগ করতে দেবে?

মোহাম্মদ আলী আরাফাত: এটা ঠিক, আমাদের বিদ্যমান আইনি কাঠামোতে মরিশাসে বিনিয়োগ করার জন্য ডলার নেওয়া যাবে না। সেখানে যেহেতু স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক আছে এবং তাদের মাধ্যমে আমি আরো কিছু ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি। বিনিয়োগকারীদের মরিশাসে মোট যে পরিমাণ বিনিয়োগ লাগবে তার ২০ শতাংশ যদি বাংলাদেশ থেকে নিতে পারে তাহলে ৮০ শতাংশ ওখানকার ব্যাংকগুলো দিবে। বাংলাদেশে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের আবরার আনোয়ার এখন মরিশাসে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সিইও। তার সঙ্গেও ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে কথা বলেছি। সেখানে বিনিয়োগ করলে আফ্রিকার দেশগুলোতে পণ্য রফতানি করা যাবে এবং এটা আমাদের জন্য ভালো সুযোগ।

বিষয়টি নিয়ে আমি অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। আমাদের কিছু কোম্পানি ধরে ধরে লিবারেলাইজ করা উচিত।‌ শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রির একটা হিউজ অপরচুনিটি আছে সেখানে।

রাজনীতি ডটকম: মরিশাসে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?

মোহাম্মদ আলী আরাফাত: দুই দিনের একটি কনফারেন্সে গিয়েছিলাম। পশ্চিম ভারত মহাসাগর অঞ্চলে মাদক পাচার এবং মাদকদ্রব্যের অপব্যবহারবিষয়ক প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন ছিল এটি। মরিশাসের তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী দীপক বালগোবিনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।

বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে মরিশাসের প্রতি আহ্বান রেখেছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মরিশাসের পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়কমন্ত্রী মনীশ গোবিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠককালে এ আহ্বান জানাই।

শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আরো শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে আমরা একটা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মত হয়েছি। আমাদের দিক থেকে কাজ শেষ, বাকিটা এখন তারা করবে। মরিশাস ছোট দেশ, তবে সুযোগ যতটুকু আছে ততটুকু আমরা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারলে লাভবান হব।

মরিশাস সম্পর্কে

ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাসের দাপ্তরিক নাম ‘দ্য রিপাবলিক অব মরিশাস’, যা আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে এবং মাদাগাস্কারের পূর্ব দিকে অবস্থিত।

মরিশাসের আয়তন দুই হাজার ৪০ বর্গকিলোমিটার। ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে দেশটির মোট জনসংখ্যা ১২ লাখ ৬৫ হাজার ৪৭৫ জন। এর মধ্যে ১৭.৩০ শতাংশ মুসলিম এবং তারা উর্দু ভাষায় কথা বলে। ১২ মার্চ ১৯৬৮ সালে দেশটি যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। মরিশাসের প্রেসিডেন্ট পৃথ্বীরাজ সিং রূপণ গত বছরের ১১ মে ঢাকা সফর করেন। এ বছর দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

r1 ad
r1 ad