top ad image
top ad image
home iconarrow iconমতামত

উপজেলা নির্বাচন : বর্জন ও অর্জন

উপজেলা নির্বাচন : বর্জন ও অর্জন

গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা কারো অর্জন এবং কারো বর্জনে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন দেখলেই পিছু হটছে বিরোধীরা। সরকারি দলের নেতাদের পকেটে চলে যাচ্ছে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের পদগুলো।

রাজনীতির এই পরিস্থিতিকে কেউই স্বাভাবিক বলে মনে করছেন না। কিন্তু ভাবনা যার যা থাকুক না কেনো, নির্বাচন তো হয়ে যাচ্ছে। দৃশ্যত লাভবান হচ্ছে সরকারি দল।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতে স্থানীয় নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সংঘবদ্ধ করতেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে বিএনপির একটি অংশ। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তের বাইরে সেটি করতে গেলে বহিষ্কারের সম্ভাবনা রয়েছে। তারপরও বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় দলীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়ে গণসংযোগ করছেন। শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, তা দেখার জন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

আগামী ৮ মে থেকে দেশজুড়ে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তার মিত্ররা। প্রথম ধাপে ১৫০টি উপজেলা পরিষদে আগামী ৮ মে নির্বাচনের জন্য ১৫ এপ্রিল ছিলো মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ওইদিন ঢাকার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার দলীয় সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। তার মানে জাতীয় নির্বাচনের মতো বিএনপি উপজেলা নির্বাচনও বয়কট করবে।

যদিও আগে থেকে ধারণা ছিল যে, বিরোধীরা এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। ১৫ এপ্রিলের পর এ নিয়ে আর কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব রইল না। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মধ্যে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয় নিয়ে কিছু আলোচনা হয়েছিল। সেখানে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে নানা আলোচনা হয়। তবে দলের সিদ্ধান্তে কোনও পরিবর্তন আসেনি।

বিএনপি ছাড়াও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলো এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। তাদের এই বর্জনের মাধ্যমে সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রায় ৫০০ উপজেলার সবকটি অর্জন করবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শরিকদের কিছু আসনে ছাড় দিলেও উপজেলা নির্বাচনে সেই সম্ভাবনা নেই। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এটা সম্ভবও নয়। তাই আওয়ামী লীগের শরীক দলগুলো স্থানীয় নির্বাচনের মাঠ থেকে একরকম হারিয়ে যাওয়ার অবস্থায় রয়েছে।

দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ বিরোধী দলের বয়কটের মধ্যে ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখাতে দলীয় ‘ডামি’ প্রার্থীদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা উন্মুক্ত করে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।

অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নেবে না-এমন আগাম ধারণা থেকে আওয়ামী লীগ গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঘোষণা দেয় যে, উপজেলা নির্বাচনে সরকারি দল কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে না এবং কেউ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’ পাবে না।

স্থানীয় পর্যায়ে এ বছরই প্রথমবারের মতো নির্বাচন কমিশন (ইসি) শুধু অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা নিয়েছে। ৮ মে অনুষ্ঠিতব্য প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মোট ৬৯৫ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী অনলাইনের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ৭২৪ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৭০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলায় ৮ মে, দ্বিতীয় ধাপে ২৩ মে, তৃতীয় ধাপে ২৯ মে এবং চতুর্থ ধাপে ৫ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এসব নির্বাচন হয়তো হয়ে যাবে, কোথাও শান্তিপূর্ণ হবে, কোথাও গোলযোগপূর্ণ হবে। কিন্তু দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা এমন এক অবস্থায় চলে গেছে যে, এর বিশ্বাসযোগ্যতা এবং এটা নিয়ে আস্থা অর্জন করা বিশাল চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হয়ে গেছে। একপক্ষ ভোট বর্জন করবে, আরেকপক্ষ অর্জন করতে থাকবে এবং এর মাধ্যমে সুষ্ঠু জনমতের প্রতিফলন যেমন ঘটবে না, তেমনি নির্বাচনী ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা তলানিতেই থেকে যাবে।

r1 ad
r1 ad