দুর্নীতির মচ্ছব বন্ধে এখনই চাই ‘বিশেষ কমিশন’
অভিনন্দন অর্থমন্ত্রীকে প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদে জাতীয় বাজেট উত্থাপনের জন্য। অর্থমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার সিনিয়র ভাই। অর্থনীতি বিভাগে আমরা যখন অধ্যাপক রেহমান সোবহানের দুই অর্থনীতির প্রেরণায় পাকিস্তানি ২২ পরিবারের সম্পদ কুক্ষিগত করার, আঞ্চলিক বৈষম্য, গরীব-বড়লোকের বৈষম্য, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম, তিনি তাদের একজন ছিলেন। কূটনীতির ময়দানে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার রয়েছে অনন্য অবদান।
এটা তাই স্বাভাবিক ছিল যে ষাটের দশকের ও মুক্তিযুদ্ধের নৈতিকতার ভিত্তিতে সেসব লড়াইয়ে সাহসের ভিত্তিতে তিনি এক সাহসী বাজেট দেবেন। কিন্তু দুঃখের সাথেই বলছি এই বাজেট জনমনে বিশেষ আশা জাগায়নি, স্বস্তি দেয়নি।
অর্থমন্ত্রী বরং সাবেক অর্থমন্ত্রীর পথেই হেঁটেছেন। আমি গত দুই বাজেটের আলোচনায় যে কথা বলেছিলাম তার পুনরাবৃত্তি করে বলতে চাই- এক নিষ্ঠুর অলিগার্করা দেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। সেই অলিগার্কির স্বার্থ রক্ষার্থে মূল্যস্ফিতি কমিয়ে আনা যায়নি।
দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, অর্থপাচার, ব্যাংকিং খাতে লুট ও নৈরাজ্য, খেলাপি ঋণের বিশাল পাহাড় দেশের অর্থনীতিকে ভঙ্গুর অবস্থায় উপনীত করেছে। এর থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার, জন ও রাষ্ট্রীয় জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনাই ছিল বর্তমান সময়ের জরুরি কর্তব্য। কিন্তু সেই লক্ষ্যে বাজেটে কোন কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায় না। আওয়ামী লীগের যে নির্বাচনী ইশতেহারের কথা বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে বাজেট প্রস্তাবনা তার থেকে যোজন যোজন দূরে, সাংঘর্ষিক।
বাজেটে মূল্যস্ফিতি সম্পর্কে বৈশ্বিক সংকটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই একই বৈশ্বিক সংকটে শ্রীলঙ্কা—ভারত মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে পারলেও বাংলাদেশ পারছে না কেন-সে কথা বলার প্রয়োজন ছিল।
অর্থমন্ত্রী অবশ্য বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে আগামী ৬ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার আশা দিয়েছেন। আমরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করব। ৬ মাস পর এই সংসদে এ ব্যাপারে পর্যালোচনা উত্থাপনের জন্য আমি প্রস্তাব করছি।
মূল্যস্ফিতির অভিঘাত সাধারণ মানুষকেই বহন করতে হয়। এর ফলশ্রুতিতে যে বিষয়টি সাধারণ মানুষকে সর্বাপেক্ষা পীড়িত করছে তা হচ্ছে উচ্চ দ্রব্যমূল্য। আমি সংসদে কাউকে কাউকে ঢোক গিলে বলতে শুনেছি মানুষ কষ্টে আছে।
মানুষ কষ্টে নাই কেবল, মানুষকে তাদের সঞ্চয় ভেঙে খেতে হচ্ছে। খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা কমিয়ে দিতে হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী এই বাস্তবতার আলোকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আমদানির ওপর কিছু শুল্কছাড় দিয়েছেন। এটা ইতিবাচক। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় এর প্রভাব বাজারে পড়বে না। সরকার নিজেই স্বীকার করেন বাজার সিন্ডিকেট এর জন্য দায়ী। কিন্তু সেই সিন্ডিকেট ভাঙার, তাদের বিচারের আওতায় আনার কোনো ব্যবস্থা নাই।
ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কার্যক্রম অপ্রতুল। তাছাড়া বাজেটে পরোক্ষ করের যে বিস্তৃত বোঝার প্রস্তাব করা হয়েছে তার অভিঘাত বাজারের ওপরই পড়বে। এ ক্ষেত্রে টিসিবির ডিলারশিপ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে ১ কোটি ফ্যামিলি কার্ডের কথা। কিন্তু এসব পদক্ষেপ গরীব মানুষের একাংশকে কিছুটা স্বস্তি দিলেও নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য তা বিশেষ কোনো ফল বহন করবে না।
এক্ষেত্রে আমাদের বহু বলা দাবি অর্থাৎ গণবণ্টন ব্যবস্থায় পূর্ণাঙ্গ রেশনিং ব্যবস্থা চালুর কথা বলছি। স্বাধীনতাত্তোরকালে পরিস্থিতি সামলাতে বঙ্গবন্ধু স্টেটুয়ারি রেশনিং মডিফাইড রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। ন্যায্যমূল্যের দোকান খুলে দিয়েছিলেন। আর কিছু না হোক শ্রমিকাঞ্চলে সরকার প্রতিশ্রুত রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার কথা আমি অর্থমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিবো।
বঙ্গবন্ধু তার শেষ সময় পর্যন্ত বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তার সেই বাংলাদেশ এখন উচ্চ বৈষম্যের দেশ। কিন্তু তার স্বীকৃতি বাজেটে নাই। সরকারি পরিসংখ্যান মতেই উপরের দশ ভাগের হাতে বাংলাদেশের সম্পদের ৪১% ভাগ কেন্দ্রীভূত। আর নীচের দশভাগের হাতে রয়েছে ১.৩১% ভাগ মাত্র। নিউ ইয়র্কের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ এক্স— এর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন ধনী উৎপাদনে ২০১০—২০১৯ সালে পৃথিবীর নেতৃস্থানে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৩ সালের শেষ ভাগে কোটিপতি ব্যাংক একাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৬ যেটা ২০০০ সালে ছিল মাত্র ৩ হাজার ৪৪২টি। ওই হিসাব অনুযায়ী এই কোটিপতিদের ১% ভাগ ব্যাংকের মোট আমানতের ৪৩.৪৫ ভাগের মালিক।
এ কথা বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের অবাক করা ধনী উৎপাদনে ঈর্ষান্বিত না হয়ে এটাকে ভালভাবে নেয়া উচিত। এই ধনই নীচের দিকে ট্রিকাল ডাউন করবে।
এ যুক্তি গ্রহণ করা যেত যদি এই সম্পদ দেশে বিনিয়োগ হত। তা না হয়ে এই অর্থ সম্পদ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। মার্কিন ফাইনানশিয়াল ইনট্রিগেটি ইনস্টিটিউশন দেখিয়েছে যে, বছরে ৭ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে কানাডার বেগম পাড়ায়, মালেশিয়ার সেকেন্ড হোমে, সিঙ্গাপুর, দুবাইয়ের আধুনিক শপিংমল, রিয়েল এস্টেট ও হুন্ডি ব্যবসায়। এই টাকার লভ্যাংশও দেশে আসছে না। পাচারকৃত টাকা ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ নাই। অথচ প্রবাসীরা বিদেশে হাড়ভাঙা খাটুনির যে আয় দেশে পাঠায় তার ওপর কর বসানো হচ্ছে। তাদের বিদেশ যাত্রা নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।
এই অর্থ সম্পদ উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে তা ফেরত না দেয়া। ব্যাংক লুট ও দুর্নীতি। ২০০৯ সালে ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকার ঋণ এখন ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। পুনতফসিলীকরণ ও অবলোপন ধরলে এর পরিমাণ ৪ থেকে ৫ লাখ হাজার কোটি টাকা দাঁড়াবে।
স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ২০১৯ সালে সাবেক অর্থমন্ত্রী যখন বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থে খেলাপী ঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে ডাউন পেমেন্ট ৩০ শতাংশ থেকে ২ শতাংশে নামিয়ে আনেন, তখন এতে আপত্তি করতে আমার দেয়া ৬৮ বিধির নোটিশ আপনি আলোচনা করতে দেন নাই। সেদিন অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন আর এক টাকাও খেলাপি ঋণ বাড়বে না। কিন্তু কেবলমাত্র এই বছরের প্রথম প্রান্তিকেই ৩৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। আর পুরোটার কথা আগেই বলেছি।
সেদিন এ বিষয় আলোচনা হলে সংসদের বিবেক অন্তত পরিষ্কার থাকত। এখন আমরা নই কেবল, একজন শিল্পউদ্যোক্তা সংসদ সদস্য টেলিভিশনে বলছেন ৪/৫ জন লোক ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে দিয়েছে। আর ব্যাংকের নৈরাজ্য ও লুট বন্ধ করতে অর্থমন্ত্রী সংসদ কতৃর্ক পাশ করা যে ব্যাংক সংশোধন আইনের কথা উল্লেখ করেছেন তাও একই স্বার্থে প্রণীত। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে ‘ব্যাংক কমিশন’ গঠন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবদুল মুহিত। পরের অর্থমন্ত্রী তাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। আর এখন ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তুঘলকি কাণ্ড করছে।
আমি দেশের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি সম্পর্কে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। বিএনপি আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচ পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। আমি সে সময় বিভিন্ন লেখায় দেখিয়েছিলাম দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলেই আমাদের প্রবৃদ্ধি ২.৫ ভাগ বৃদ্ধি পেত। বিএনপি আমলের দুর্নীতির বিশ্ব সূচকে আমাদের সেই কলঙ্ক দূর হলেও ওই সূচকে বাংলাদেশ এখনও শীর্ষ দশের মধ্যে রয়েছে। বরং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির সম্প্রতি যে চিত্র বেরিয়ে আসছে। তা দেশের ভাবমূর্তি কেবল নয়, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা সৃষ্টি করছে। এ কথা এখন আর অস্বীকার করার উপায় নাই যে সাবেক পুলিশ প্রধান ও সেনা প্রধানের দুর্নীতির চিত্র হিমশৈলের ক্ষুদ্র উপরিভাগ মাত্র। এখনই বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে দুর্নীতির এই বিস্তার রোধ করা না গেলে হিমশৈলের ধাক্কায় দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির সলিল সমাধি হবে। মাননীয় স্পিকার, আমি এই প্রসঙ্গে চীনে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে পলিট ব্যুরোর নেতার পদচ্যুতি ও বিচারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ভিয়েতনামে মিলিনিয়ার ব্যাংকারের মৃত্যুদণ্ডের কথা উল্লেখ করছি। আমি সে পর্যন্ত যাব না। আমি কেবল বলব দুর্নীতির এই মচ্ছব বন্ধ করতে এখনই ‘বিশেষ কমিশন’ গঠন করুন, দুর্নীতিবাজদের অর্থ সম্পদ বাজেয়াপ্ত, বিচার করে কঠিনতম শাস্তি দিন। ঋণখেলাপী অর্থ আত্মসাতকারীদের জন্য ‘ট্রাইব্যুনাল গঠন’ করুন।
উন্নয়নের বেদনা আছে। সেই বেদনা যদি চোখের সামনে দেশের সম্পদ লুট করার কারণে হয় তবে সেটা গ্রহণ করা যায় না। ওই লুটের টাকাকে যখন সাদা করার জন্য সৎ উপায়ে অর্জিত অর্থের চেয়ে অর্ধেক কর দিয়ে সাদা করার প্রস্তাব করা হয় তখন সেটা সততার জন্য তিরস্কার ও অসততার জন্য পুরস্কারের শামিল হয়ে দাঁড়ায়। মাননীয় স্পিকার, এ সম্পর্কে যে সকল যুক্তি দেয়া হচ্ছে তা কেবল আসার নয়, এ প্রসঙ্গে সরকারের অতীত অবস্থানের বিপরীত। খালেদা জিয়ার জন্য যেটা অনৈতিক, বর্তমানেও সেটা অনৈতিক। আশা করি অর্থমন্ত্রী এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করে সংসদকে এর দায়ভার থেকে রেহাই দেবেন।
বিভিন্ন খাতের বরাদ্দ হিসেবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ টাকার অংকে বেড়েছে। কিন্তু জিডিপি’র শতকরা হারে নয়। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ সর্বশ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। অথচ সেই বিনিয়োগ এখন নাই। বরং শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা সাম্প্রদায়িক—মৌলবাদীদের আক্রমণে ক্রমশঃ পিছু হটছি। সমঝোতা করছি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাহসী উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু এত কম বরাদ্দ নিয়ে স্বাস্থ্যখাতে বিশেষ কার্যক্রম নেয়া যাবে না।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ বেড়েছে। কিন্তু আমি বহুবার বলেছি এখানে শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে। সরকারি পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ ও মুক্তিযুদ্ধের ভাতাও সামাজিক নিরাপত্তার অন্তর্ভুক্ত।
এই বাজেট অধিবেশনের পূর্বেই আমরা একজন সংসদ সদস্যের নৃশংস খুনের ঘটনা জেনেছি। কিন্তু তার দেহাবশেষ না পাওয়ার শোক প্রস্তাব নিতে পারিনি। এই দুঃখজনক ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের স্বর্ণ—মাদক চোরাচালানি ও অপরাধ জগতের সাথে সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক ক্ষমতার সংশ্লিষ্টতার যে খবর প্রকাশিত হচ্ছে তাতে সংসদের ভাবমূর্তি তো বটেই, সংসদ সদস্য ও রাজনীতির ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তাই কেবল খুনের ঘটনা হিসাবে নয় এহেন বিপজ্জনক অপরাধের সাথে সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক ক্ষমতায় যোগের বিষয়টাও খতিয়ে দেখা দরকার।
বিএনপি—জামায়াত আমলে অর্থনীতি—রাজনীতির দুর্বৃত্তয়নের বিরুদ্ধে যে লড়াই আমরা করেছি ও জিতেছি তা যেন ভুলে না যাই। নিজেদের আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির সাহস নিয়ে যদি আমরা এগুতে পারি তবেই কেবল প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া যাবে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম অর্থপূর্ণ হবে।
আমি শেষ করব নদীর কথা বলে- প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে ভারত তিস্তার পানি প্রবাহ বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতার কথা বলেছে। একে স্বাগত জানাই। কিন্তু তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না করে এই সহযোগিতা গাছের গোড়া কেটে উপর দিয়ে পানি ঢালার শামিল। ওই সফরে গঙ্গা চুক্তির নবায়নের কথা এসেছে। তার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু ওই চুক্তিতে গঙ্গার পানি প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য সংকোশ থেকে খাল কেটে গঙ্গার পানি প্রবাহ বৃদ্ধির যে বিষয়টি ছিল তা ৩০ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। বরং এখন ফারাক্কার ওপরে আরেকটি ব্যারেজ তৈরির কথা এসেছে। আমি আশা করি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে এই সরকারের আমলেই ভারতের সাথে একটি সমাধানে আসা সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী সংসদে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা বলেছেন। কিন্তু বাজেটে তার জন্য কোনো বরাদ্দ নাই। বাজেট বরাদ্দে প্রতিটি ক্ষেত্রেই রংপুর বিভাগ বঞ্চিত হয়েছে। এই আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করে তিস্তাসহ উত্তরবঙ্গের জন্য সমবরাদ্দের ব্যবস্থা নিতে হবে। তিস্তা নিয়ে যেন আমরা ভূ—রাজনীতির দ্বৈরথের শিকার না হই। প্রয়োজনে পদ্মাসেতুর মত নিজেদের অর্থায়নে তিস্তা কর্তৃপক্ষ গঠন করে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী চ্যাম্পিয়ন অব আর্থ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। জলবায়ু পরিবর্তনের লড়াইয়ে পৃথিবীতে তার নেতৃত্ব অব্যাহত থাকবে সেই আশা করছি।
[জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা, ২৪ জুন ২০২৪]