বাংলাদেশি ও ভারতীয়দের চোখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
এমন একটি দেশের নির্বাচন, যেটি নিয়ে আলোচনা চলছে সারা পৃথিবীতে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের যেসব মানুষ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন তাদের মধ্যেও এই নির্বাচন নিয়ে রয়েছে আলাদা আলাদা ভাবনা।
এই নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাঙালিদের জীবনে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলতে না পারলেও বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতি, বৈদেশিক সম্পর্ক, এবং অভিবাসন নীতির উপর এর সুস্পষ্ট প্রভাব রয়েছে। প্রবাসী বাঙালিরা, বিশেষ করে নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে তাদের অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে চিন্তা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ভোট গ্রহণের দিন সেখানে বসবাসরত পাঁচ জন বাংলাদেশি ও একজন ভারতীয়র সঙ্গে কথা বলে ছে ডিডাব্লিউ বাংলা। তাদের মধ্যে চারজন ভোটার ও বাকি দুইজন পড়াশোনা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে নিজেদের ভাবনা এবং প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন তারা। কেউ মনে করেছেন লড়াই হবে জমজমাট৷ জমজমাট লড়াইয়ে শেষ হাসি কমলা হ্যারিসই হাসবেন- এমনটি যারা ভেবেছিলেন তাদের হতাশ করার মতো ইঙ্গিতই উঠে আসছে নির্বাচনের ফলাফলে।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফলে অভিবাসন নীতির উল্লেখযোগ্য প্রভাব থাকে। রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অভিবাসন সম্পর্কিত নীতির পার্থক্য রয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা সাধারণত বেশি উদার অভিবাসন নীতির পক্ষে, অন্যদিকে রিপাবলিকানরা কঠোর নীতির পক্ষে। এই কারণে প্রবাসী বাঙালিরা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বিশেষ মনোযোগ দেন, কারণ, নির্বাচনের ফলাফল তাদের পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনদের ভবিষ্যৎ অবস্থানকে প্রভাবিত করতে পারে।
এবার ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে জিতেছিলেন। এবারের নির্বাচন থেকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শেষ দিকে সরে দাঁড়ানোর পর তিনি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন। যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত কোনো নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি। হিলারি ক্লিনটন ২০১৬ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে হেরে যান। ট্রাম্প এবার তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হলেন। ২০২০ সালে জো বাইডেনের কাছে হেরে এবার তার দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট হওয়া এ মুহূর্তে অনেকটাই সুনিশ্চিত৷
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেলে কথা হয় নিউইয়র্কের কুইন্সে শহরের বাসিন্দা মিফাত নায়ারের সঙ্গে৷ শিক্ষার্থী মিফাত চারবছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। মিফাত বলছিলেন, ‘‘এখানে আমার দেখা মতে, বাঙালি কমিউনিটির মধ্যে কমলা হ্যারিস এবং ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন প্রায় সমান সমান। তবে কেউ কেউ অগ্রিম ভোট দিয়ে ফেলেছেন এবং অনেকেই ডনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন অ্যামেরিকার সার্বিক উন্নয়ন ও চলমান বর্ডার ক্রসিংসহ নানাবিধ সমস্যাগুলো সমাধানের আশায়। তবে ট্রাম্প জিতলে মধ্যপ্রাচ্যে আরো ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই।'' মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি কোনদিকে যায় তা অবশ্য এখন সময়ই বলতে পারবো৷
মিফাতের কথায় অবশ্য কমলা হ্যারিসের জন্য আশার কথা ছিল, ছিল আশঙ্কার কথাও, নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিস বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তবে তা হিলারি ক্লিন্টনের চেয়ে বেশি নয়। আর অ্যামেরিকানদের ভোট দেওয়ার ধারা অনুযায়ী একজন নারীকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচন করা এখনো মনে হচ্ছে বেশ কঠিন হবে।
বলা বাহুল্য, ভোটের ফলাফলে মিফাতের এই পর্যবেক্ষণ অনেকটাই প্রতিফলিত। বাংলাদেশের দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার সাংবাদিক মোহাম্মদ আল মাসুম মোল্লা এখন নরম্যান শহরে পড়াশোনা করছেন। মঙ্গলবার ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এটা রেড স্টেট। তবে এই শহরে ডেমোক্র্যাটদের একটা ভালো প্রভাব রয়েছে। এখানে বাংলাদেশের মতো এত উত্তাপ নেই। সবাই সবার মতো ভোট দিচ্ছে। স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। অনেক বেশি মাত্রায় মানুষের সমাগম আমার চোখে পড়েনি।'
মাসুম আরো বলেন, ‘রেড স্টেট ও ব্লু স্টেটগুলোতে বোঝা যায় কে নির্বাচিত হবেন। সুইং স্টেটগুলোতে মূলত ভাগ্য নির্ধারণ হবে। আমার মনে হচ্ছে, এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এবার আর্লি ভোট ২০১৬ সালের চেয়ে কম হয়েছে। সেবার ট্রাম্প নির্বাচিত হয়েছেন। এবার ৫০ শতাংশ পড়েছে। এটা নিয়ে রিপাবলিকানরা একটু চিন্তায় আছে।’
ফ্লোরিডা নিবাসী মোহাম্মদ হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কিছু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন আবার কিছু কমলা হ্যারিসকে ভোট দিয়েছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই রাজ্যে ট্রাম্পের ভোটার বেশি। তিনি জয়লাভ করলে এই রাজ্যে লাভ বেশি হবে। আমি ও আমার স্ত্রী ট্রাম্পকেই ভোট দিয়েছি। এই রাজ্যে রিপাবলিকান সমর্থক বেশি। তবে রাজ্য অনুযায়ী ভোট ভাগ হয়। যদি নিউইয়র্কে থেকে ট্রাম্পকে ভোট দেওয়া হয়, সেটি বৃথা। আবার ফ্লোরিডাতে থেকে কমলাকে ভোট দেওয়া বৃথা।’
নিউইয়র্ক সিটির বাসিন্দা কামাল হোসাইন জানালেন, প্রার্থীদের ইলেকশন ক্যাম্পেইনের খবর তিনি খুব একটা রাখেননি।তবে নিউইয়র্ক এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটা অনেক ব্যস্ত শহর। নিউইয়র্কটা ডেমোক্র্যাটদের একটা ঘাটি বলা যায়। এবারও এখান থেকে কমলা হ্যারিসের জেতার সম্ভাবনা বেশি।’ তবে তিনি জানান ট্রাম্পকে সমর্থন করার পক্ষে জোরালো যুক্তিও দেখিয়েছেন অনেকে, ‘অনেকেই বলছে, ট্রাম্পকে ভোট দিলে চলমান যুদ্ধগুলো থামতে পারে। তার ইশতেহারও অনেকেই পছন্দ করেছে।’
ভারত থেকে এসে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হয়েছেন আশা বেন প্যাটেল৷ তিনি যেখানে থাকেন সেই ন্যাশনাল টেনেসি এলাকাতেও ডনাল্ড ট্রাম্প খুব জনপ্রিয়। তাই আশা বলছিলেন, ‘এটা একটা রেড স্টেট আর এখানে সবাই ট্রাম্পকেই ভোট দিচ্ছে। এর বড় কারণ, এখানে সবাই রিপাবলিকানদের বেশি মূল্য দেয়। এটা অনেক কনজার্ভেটিভ রাজ্য।’
রাশেদ মোশাররেফ ওকলাহোমার নরম্যানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পিএইচডি করছেন৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই তার। তবে স্থানীয়দের মাঝে খুব একটা আগ্রহ লক্ষ্য করেননি, ‘সাধারণ মানুষের মাঝে আগ্রহ অতটা নেই, তবে এটা কলেজ টাউন। তাই ক্যাম্পাসে যথেষ্ট উত্তেজনা আছে। তবে ওকলাহোমা ট্র্যাডিশনালি রেড স্টেট, ফলে এই স্টেটে লাস্ট ৬০ বছর কোনো ডেমক্র্যাট প্রেসিডেন্ট ক্যান্ডিডেট জিততে পারেনি।’