top ad image
top ad image
home iconarrow iconমতামত

বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের বহুমুখী প্রভাব— বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট

বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের বহুমুখী প্রভাব— বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট

একটি দেশের অর্থনৈতিক নানা সূচকের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়ে থাকে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগকে (এফডিআই)। দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে এটি বড় একটি নিয়ামকও মনে করা হয় একে। তবে এফডিআই মানেই শতভাগ ইতিবাচক, তেমনটিও নয়। এফডিআই স্বাগতিক দেশগুলোকে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে রূপান্তরিত করে। ফলে এফডিআইয়ের ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলোও বিবেচনা ও বিশ্লেষণের দাবি রাখে, যেগুলোর মধ্যে ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব উভয়ই রয়েছে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি

ইতিবাচক প্রভাব: এফডিআই মূলধন সঞ্চালন, উৎপাদনশীলতা ও জিডিপি বৃদ্ধি করে।

- চীন: ১৯৯০ সালে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২০ সালে এফডিআই প্রবাহ ১৪৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে (বিশ্ব ব্যাংক)। ১৯৯০-২০১৯ পর্যন্ত গড় বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৯.৫%।

- সিঙ্গাপুর: এফডিআই জিডিপির ২০-২৫%, যা মাথাপিছু আয় ৭২ হাজারে ৭৯৪ ডলারে (২০২৩) ভূমিকা রেখেছে।

নেতিবাচক প্রভাব: এফডিআই-নির্ভরতা অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। ২০১৪ সালে তেলের দরপতনে নাইজেরিয়ার জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩ শতাংশ (২০১৪) থেকে ঋণাত্মক ১ দশমিক ৬ শতাংশে (২০১৬) নেমে আসে।

কর্মসংস্থান ও মজুরি

- চাকরি তৈরি: ভিয়েতনামের ইলেকট্রনিকস খাতে এফডিআইনির্ভর ১.৫ মিলিয়ন কর্মসংস্থান।

- মজুরির মান: মেক্সিকোর মাকিলাডোরাস শিল্পে মজুরি মার্কিন সমতুল্যের চেয়ে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কম।

প্রযুক্তি হস্তান্তর ও উদ্ভাবন

ইতিবাচক: আয়ারল্যান্ডে গুগল-অ্যাপলের মতো কোম্পানিগুলো গবেষণায় ৪.১ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করে (২০২২)।

সীমাবদ্ধতা: OECD গবেষণা (২০২০) অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলোর মাত্র ৪০ শতাংশ কার্যকর প্রযুক্তি হস্তান্তর করে।

অবকাঠামো উন্নয়ন

ইতিবাচক: ভারত ২০২২ সালে নবায়নযোগ্য শক্তিতে ৭ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার এফডিআই পেয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট লক্ষ্যমাত্রায়।

বৈষম্য: শহুরে অঞ্চলে অবকাঠামো কেন্দ্রীভূত হয়, যা আঞ্চলিক বৈষম্য বাড়ায়।

বাণিজ্য ভারসাম্য

লাভ: ভারত ২০২১-২২ সালে ৮৫ বিলিয়ন ডলার এফডিআই পেয়েছে।

ঝুঁকি: ২০২২ সালে লাতিন আমেরিকা থেকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ৮৮ বিলিয়ন ডলার মুনাফা প্রত্যর্পণ করে (UNCTAD)।

সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রভাব

ভোক্তা আচরণ: চীনের ফাস্ট-ফুড বাজার ২০২৩ সালে ১৮০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

শ্রম মান: রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতে নিরাপত্তা মান উন্নীত হয়েছে।

পরিবেশগত প্রভাব

ক্ষতি: নাইজেরিয়ার নাইজার ডেল্টায় ১৯৫০ সাল থেকে ২,৪০,০০০ তেল ছড়ানো রেকর্ড করা হয়েছে।

টেকসই উন্নয়ন: EU ২০২১-২৫ সালে ১০০ বিলিয়ন ইউরো ‘গ্রিন এফডিআই’ বিনিয়োগ করছে, নির্গমন ৫৫ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যে।

রাজনৈতিক প্রভাব

নীতিনির্ধারণ: উবার ২০১৭ সালে কেনিয়ায় রাইড-হেলিং নিয়ম বিলম্বিত করায় চাপ তৈরি করে।

দুর্নীতি: গিনির ২০০৮ সালের খনিজ চুক্তিতে রিও টিন্টোর সাথে অস্বচ্ছ শর্ত জড়িত ছিল।

স্থানীয় শিল্পের ওপর প্রভাব

প্রতিযোগিতা: ওয়ালমার্টের দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবেশে (২০১১) ক্ষুদ্র ব্যবসা হ্রাস পেয়েছে।

উদ্ভাবন: ব্রাজিলের এমব্রায়ার এয়ারোস্পেস বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী নেতা হয়েছে।

দক্ষতা উন্নয়ন

প্রশিক্ষণ: ইন্টেল কোস্টারিকায় ৭০ হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে (১৯৯৭-২০২০)।

মস্তিষ্ক পলায়ন: দক্ষ কর্মীরা বিদেশি কোম্পানিতে চলে গেলে স্থানীয় উদ্যোগ দুর্বল হয়।

কেস স্টাডি

আয়ারল্যান্ড: করপোরেট ট্যাক্স ১২ দশমিক ৫ শতাংশ এফডিআই আকর্ষণ করে, মাথাপিছু আয় ১৫ হাজার ডলার (১৯৯৫) থেকে এক লাখ ২ হাজার ডলার (২০২৩)।

নাইজেরিয়া: তেলনির্ভর এফডিআই পরিবেশ ক্ষতি ও দারিদ্র্য বাড়িয়েছে (৪০ শতাংশ জনগণ দরিদ্র)।

প্রধানত, এফডিআইয়ের প্রভাব নির্ভর করে স্থানীয় নীতির ওপর। টেকসই উন্নয়নের জন্য কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ, অবকাঠামো বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি হস্তান্তর জরুরি। UNCTAD-এর মতে, এফডিআই একটি ‘দ্বিধারী তরবারি’। সুষম নীতি না থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।

বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) কীভাবে দেশগুলোকে রূপান্তরিত করে তার আরও কিছু বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন—

খাতভিত্তিক রূপান্তর— মধ্য ইউরোপের অটোমোটিভ শিল্প

  • ভক্সওয়াগন, কিয়া ও জাগুয়ার ল্যান্ড রোভারের এফডিআইয়ের ফলে স্লোভাকিয়া বিশ্বের সর্বোচ্চ মাথাপিছু গাড়ি উৎপাদনকারী দেশ (২০২২ সালে ১১ লাখ গাড়ি)। এ খাত স্লোভাকিয়ার শিল্প উৎপাদনের ৪৪ শতাংশ।

  • হাঙ্গেরি ২০১০-২০২৩ সালে অটোমোটিভ খাতে ২০ বিলিয়ন ইউরো এফডিআই আকর্ষণ করে, যা এক লাখ ৬৫ হাজার চাকরি তৈরি করেছে এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যাটারি উৎপাদনের কেন্দ্রে পরিণত করেছে।

  • পূর্ব আফ্রিকায় প্রযুক্তি: রুয়ান্ডায় গুগল ও মাইক্রোসফটের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ডেটা সেন্টার ও এআই ল্যাব নির্মাণে ২০২২ সালে প্রযুক্তি খাতে এফডিআই ৬৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

দারিদ্র্য হ্রাস ও বৈষম্য

ভিয়েতনাম: টেক্সটাইল ও ইলেকট্রনিক্সে এফডিআই চালিত উৎপাদন শিল্পের কারণে দারিদ্র্যের হার ৫৮ শতাংশ (১৯৯৩) থেকে ৫ শতাংশে (২০২০) নেমে আসে। তবে শীর্ষ ১০ শতাংশ জনগণ জাতীয় আয়ের ৩৩ শতাংশ উপার্জন করে (বিশ্ব ব্যাংক, ২০২৩)।

বাংলাদেশ: পোশাক শিল্পে এফডিআই (এইচঅ্যান্ডএম, জারা সরবরাহকারী) ১৯৯০ সাল থেকে ২৫ মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্য থেকে উত্তরণে সাহায্য করেছে। তবে কর্মীদের মাসিক আয় ১১৩ ডলার (জীবনযাত্রার ন্যূনতম মজুরি ২০৮ ডলার)।

পরিবেশগত ও জলবায়ু প্রভাব

চিলি: নবায়নযোগ্য শক্তিতে ২০২২ সালে ১৫ বিলিয়ন ডলার এফডিআইয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য শক্তির অংশ ৫ শতাংশ (২০১০) থেকে ৩২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা লক্ষ্য।

ব্রাজিলে বন উজাড়: কৃষি খাতে এফডিআই (যেমন— কার্গিল, বাঞ্জ) ২০২১ সালে আমাজনে ১৩ হাজার ২৩৫ বর্গকিলোমিটার বন উজাড়ে ভূমিকা রেখেছে, যা বৈশ্বিক জলবায়ু লক্ষ্যকে ক্ষুণ্ন করছে।

রাজনৈতিক প্রভাব ও ঋণের ফাঁদ

শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দর: ২০১৭ সালে চীনের সঙ্গে ১১০ কোটি ডলারের এফডিআই চুক্তি ঋণখেলাপির পর ৯৯ বছরের লিজে রূপান্তরিত হয়, যা ‘ঋণের ফাঁদ কূটনীতি’ বিতর্ক তৈরি করে।

জাম্বিয়া: খনিতে চীনা এফডিআই (২০২২ সালে জাম্বিয়ার মোট এফডিআইয়ের ৬০ শতাংশ) দেশটিকে ৬০০ কোটি ডলার ঋণে জড়িয়েছে, যার ২৫ শতাংশ সরকারি আয় ঋণ পরিশোধে ব্যয় হয়।

লিঙ্গ সমতা

ইথিওপিয়া: পোশাক শিল্পে এফডিআই (পিভিএইচ, এইচঅ্যান্ডএম) ৮৫ শতাংশ নারী নিয়োগ দেয়। তবে ব্যবস্থাপনা পদে রয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ (আইএলও, ২০২৩)।

সংযুক্ত আরব আমিরাত: প্রযুক্তি স্টার্টআপে এফডিআই নারী শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ ৪১ শতাংশ (২০১৫) থেকে ৫৩ শতাংশে (২০২৩) বৃদ্ধি করলেও বেতন বৈষম্য অব্যাহত।

ডিজিটাল রূপান্তর

ভারত: প্রযুক্তি স্টার্টআপে ২০২২ সালে এফডিআই ২৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায় (২০১৬ থেকে ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি), যা ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণকে ত্বরান্বিত করেছে (ইউপিআই ২০২২ সালে ৭৪ বিলিয়ন লেনদেন প্রক্রিয়াকরণ করেছে)।

কেনিয়া: সাফারিকমের এফডিআই সমর্থিত এম-পেসা মোবাইল মানি প্ল্যাটফর্ম আফ্রিকাজুড়ে ৫১ মিলিয়ন ব্যবহারকারীকে সেবা দিচ্ছে, যা আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ২৬ শতাংশ (২০০৬) থেকে ৮৩ শতাংশে (২০২৩) উন্নীত করেছে।

শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন

মালয়েশিয়া: ইন্টেলের ৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ (২০২১-২০৩০) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ৬০ হাজার প্রকৌশলীকে এআই ও সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইনে প্রশিক্ষণ দেবে।

দক্ষিণ কোরিয়া: স্যামসাংয়ের এফডিআই-সমর্থিত গবেষণা কেন্দ্রগুলো ২০১০ সাল থেকে ২৫ হাজার স্থানীয় প্রকৌশলীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, যা বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর বাজারে ২৫ শতাংশ শেয়ার নিশ্চিত করেছে (২০২৩)।

কর স্বর্গ ও রাজস্ব ক্ষতি

আয়ারল্যান্ড: ১২ দশমিক ৫ শতাংশ করপোরেট করহারের মাধ্যমে ২০২২ সালে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার এফডিআই আকর্ষণ করেছে। তবে ইইউ অনুমান করে, বৈশ্বিকভাবে বহুজাতিক কোম্পানিগুলির কর ফাঁকির কারণে বছরে ২৪০ বিলিয়ন ইউরো ক্ষতি হয়।

পুয়ের্তো রিকো: ফার্মা খাতে এফডিআই (যেমন— ফাইজার, মার্ক) কর ফাঁকি ব্যবহার করে, যা যুক্তরাষ্ট্রকে বছরে তিন বিলিয়ন ডলার রাজস্ব ক্ষতির মুখে ফেলে (ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক, ২০২৩)।

মহামারি-পরবর্তী পরিবর্তন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রিশোরিং: কোভিড-১৯ সরবরাহ শৃঙ্খলের ঝুঁকি প্রকাশ করে, যা CHIPS Act (২০২২)-এর অধীনে দেশীয় সেমিকন্ডাক্টর কারখানায় ২০০ বিলিয়ন ডলার এফডিআই আকর্ষণ করে।

ভিয়েতনামের উত্থান: অ্যাপলের মতো কোম্পানিগুলোর চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়ায় ২০২২ সালে এফডিআই প্রবাহ ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, রপ্তানি ৩৭১ বিলিয়ন ডলার (বছরে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি)।

কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা

ঘানা: কোকো প্রক্রিয়াকরণে এফডিআই (যেমন— কার্গিল, ব্যারি ক্যালেবাউট) রপ্তানি বাড়িয়েছে। তবে কৃষকরা চকলেটের খুচরা মূল্যের মাত্র ৬ শতাংশ পায় (ফেয়ারট্রেড, ২০২৩)।

সৌদি আরব: উল্লম্ব কৃষিতে ১০ বিলিয়ন ডলার এফডিআই (২০২৩) পানির ব্যবহার ৯৫ শতাংশ কমানো এবং ২০৩০ সালের মধ্যে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা ৫০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য রাখে।

স্বাস্থ্য খাত

ভারত: ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে ২০০০ সাল থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার এফডিআই এটিকে ‘বিশ্বের ফার্মেসি’ বানিয়েছে, যা বৈশ্বিক ভ্যাকসিনের ৬০ শতাংশ উৎপাদন করে। তবে ৬৫ শতাংশ গ্রামীণ ভারতীয় সাশ্রয়ী মূল্যের ওষুধের সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

দক্ষিণ আফ্রিকা: বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবায় এফডিআই (যেমন— মেডিক্লিনিক) দ্বি-স্তর ব্যবস্থা তৈরি করেছে— ১৬ শতাংশ মানুষ বেসরকারি সেবা কিনতে পারে, অন্যদিকে ৮৪ শতাংশ মানুষ অপ্রতুল সরকারি হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল।

পর্যটন ও অবকাঠামো

মালদ্বীপ: বিলাসবহুল রিসোর্টে ২০২২ সালে ২৩০ কোটি ডলার এফডিআই জিডিপির ২৮ শতাংশ চালায়। তবে উপকূলীয় ক্ষয় ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংকট তৈরি করেছে।

দুবাই: এক্সপো ২০২০-এ এফডিআই সমর্থিত ৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ ২০২২ সালে পর্যটক সংখ্যা ১৪ দশমিক ৪ মিলিয়নে নিয়ে যায়, যদিও অভিবাসী শ্রমিকরা শোষণমূলক কাজের শিকার।

প্রধান প্রবণতা (২০২৩–২০২৪)

বৈশ্বিক এফডিআই হ্রাস: ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ও মুদ্রাস্ফীতির কারণে ২০২৩ সালে এফডিআই ১২ শতাংশ কমেছে (আঙ্কটাড)। তবে সবুজ এফডিআই ২০ শতাংশ বেড়েছে (যেমন— ইইউর ১ ট্রিলিয়ন ইউরো গ্রিন ডিল)।

ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন আফ্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এফডিআইয়ের জন্য প্রতিযোগিতা করছে (যেমন— কঙ্গোর কোবাল্ট খনি, যেখানে চীন ৭০ শতাংশ উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে)।

যাই হোক না কেন, এটা বলা যেতে পারে যে এফডিআইয়ের প্রভাব প্রসঙ্গ-নির্ভর, যা শাসন, খাতভিত্তিক ফোকাস ও বৈশ্বিক প্রবণতা দ্বারা নির্ধারিত হয়। এটি প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবন ত্বরান্বিত করতে পারে (যেমন— আয়ারল্যান্ডের প্রযুক্তি উত্থান)। তবে অনিয়ন্ত্রিত এফডিআই শোষণের ঝুঁকি বাড়ায় (যেমন— জাম্বিয়ার ঋণ, আমাজন বন উজাড়।

নীতিনির্ধারকদের সমন্বিত কাঠামোতে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। যেমন—

স্থানীয় কর্মী নিয়োগ আইন: নাইজেরিয়া তেল খাতে এফডিআইয়ের ৪৫ শতাংশ স্থানীয় কর্মী বাধ্যতামূলক করেছে।

টেকসই শর্তাবলি: কোস্টারিকার ২০২৩ এফডিআই নীতি কার্বন নিরপেক্ষতার সঙ্গে প্রণোদনা যুক্ত করেছে।

প্রযুক্তি ভাগাভাগি চুক্তি: ভারত বিদেশি ই-কমার্স কোম্পানিগুলোকে স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে ডেটা শেয়ার বাধ্যতামূলক করেছে।

এফডিআই একটি হাতিয়ার, ভাগ্য নয়। এর সাফল্য পুরোটাই নির্ভর করে কৌশলগত শাসনের ওপর। সেটি বুঝে কৌশল নির্ধারণ করতে পারলেই এফডিআইয়ের সুফল মিলবে।

লেখক: কোম্পানি সচিব, সিটি ব্যাংক পিএলসি

r1 ad
top ad image