কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি
গণপরিবহন-সংকটে দুর্ভোগে অফিসগামী মানুষ
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির দিনে গণপরিবহনের সংকটে পড়েছে রাজধানীর মানুষ। বিশেষ করে চরম দুর্ভোগে পড়েছে অফিসগামী মানুষ। রাজধানীর শনির আখড়া ও কাজলা, রায়েরবাগের কদমতলী এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন চলতে দেখা যায়নি। এসব এলাকায় অনেক মানুষকেই হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার শাহবাগ, সাইন্সল্যাব, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, এসব এলাকায় অনেক যাত্রী রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। সামান্য সংখ্যক বেসরকারি ও বিআরটিসির বাস এবং ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করছে। দীর্ঘক্ষণ পরপর আসা বাসে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। অনেকে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা নিচ্ছেন। বাস না পেয়ে যাত্রীরা হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন। অনেকে পিকআপ, ট্রাকে উঠে পড়েছেন।
পল্টন, তোপখানা রোড, বিজয়নগর, কাকরাইল, মালিবাগ, মৌচাকে গণপরিবহন কম থাকায় অফিসমুখী মানুষকে পায়ে হেঁটে চলতে দেখা গেছে।
সাইন্সল্যাব মোড়ে বাসের অপেক্ষায় থাকা আবিদা সরকার বলেন, ‘শাটডাউনে অফিস খোলা রয়েছে। অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়ে বাস পাচ্ছি না। এদিকে সিএনজি ভাড়াও বেশ চড়া। খুব বিপাকে পড়েছি।’
এদিকে সকালে দক্ষিণাঞ্চল থেকে যাত্রীবাহী বাস নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা পর্যন্ত আসতে পেরেছে। সেখানে ব্যারিকেড থাকায় বাসগুলো আটকে গেছে। বাস থেকে নেমে অসংখ্য যাত্রী মালপত্র নিয়ে হেঁটে হেঁটে গন্তব্য যাচ্ছেন। অনেকে বলছেন, তাঁরা কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য কোনো পরিবহন না পেয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। অনেক পোশাকশ্রমিককেও হেঁটে যেতে দেখা গেছে।
সকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার সব কটি গেটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে। ক্যাম্পাসের ভেতর ছিল অনেকটাই ফাঁকা। গতকাল বুধবার ছুটির দিনেও ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রবিক্ষোভ, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, গায়েবানা জানাজা, কফিন মিছিল এবং দফায় দফায় সংঘর্ষ এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
রাতে শনির আখড়ার কাজলা থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সড়কে অন্তত ২০টি জায়গায় আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। এ ছাড়া সড়কের বিভিন্ন জায়গায় গাছের গুঁড়ি ও ইট ছড়িয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
রাত সাড়ে ১২টার দিকে শনির আখড়ার কাজলা থেকে রায়েরবাগ হয়ে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সড়কে আন্দোলনকারীরা অবস্থান করছিলেন। অপরদিকে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে বিপুলসংখ্যক র্যাব, পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। কিছুক্ষণ পরপর আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে থাকেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের মুখে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কফিন মিছিল পণ্ড হয়ে যায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের দফায় দফায় পাল্টা-পাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হল বন্ধের ঘোষণা ও পুলিশের তৎপরতার মুখে অনেক শিক্ষার্থী সন্ধ্যা নাগাদ ক্যাম্পাস ছেড়ে যান।
‘শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ-বিজিবি-র্যাব ও সোয়াটের হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা এবং কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে’ আজ কমপ্লিট শাটডাউন (সর্বাত্মক অবরোধ) পালনের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এই কর্মসূচি চলাকালে শুধু হাসপাতাল, গণমাধ্যমসহ অন্যান্য জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছু বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা।