top ad image
top ad image
home iconarrow iconবিশ্ব রাজনীতিarrow iconফিচার

ইতিহাস

কাশ্মীরের রক্তাক্ত ইতিহাস

কাশ্মীরের রক্তাক্ত ইতিহাস
ভূস্বর্গ কাশ্মীর চিরকালই রক্তে রঞ্জিত

কাশ্মীর—এই নামটা শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে বরফে ঢাকা পাহাড়, শান্ত হ্রদ আর নয়নাভিরাম প্রকৃতি। কিন্তু এই সুন্দর ভূখণ্ডটি বহু বছর ধরে হয়ে আছে যুদ্ধ, দখল আর বঞ্চনার প্রতীক। কাশ্মীরের মানুষ আজও লড়ছে নিজের পরিচয় ও অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য।

১৮৪৬ সাল। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শিখ সাম্রাজ্যকে পরাজিত করে। এর ফলেই ‘লাহোর চুক্তি’ হয় ব্রিটিশদের সঙ্গে। এই চুক্তির মাধ্যমে শিখ সম্রাট দুলিপ সিং কাশ্মীর ব্রিটিশদের হাতে তুলে দেন, যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসেবে। তবে চমক এখানেই নয়। কিছুদিন পর ব্রিটিশরা আবার ‘অমৃতসর চুক্তি’ করে, যেখানে পুরো কাশ্মীর মাত্র ৭৫ লাখ রূপিতে বিক্রি করে দেওয়া হয় জম্মুর রাজা গুলাব সিংয়ের কাছে। কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া তো দূরের কথা, তাদের কোনো অস্তিত্বই যেন ধরা হয়নি।

কাশ্মীর শিখদের অধীনে থাকলেও তখন থেকেই মুসলমানদের উপর নেমে আসে নির্যাতন। কিন্তু ডোগরা রাজবংশের সময় (১৮৪৬-১৯৪৭) তা চরমে পৌঁছায়। রাজা গুলাব সিং কড়া কর বসান সাধারণ মানুষের উপর। মুসলমানদের চাকরি, শিক্ষা কিংবা ধর্মচর্চার কোনো স্বাধীনতা ছিল না বললেই চলে। এমনকি অনেক বছর পর্যন্ত কাশ্মীরের প্রধান মসজিদে নামাজ পড়াও নিষিদ্ধ ছিল।

১৮৭৭ থেকে ১৮৭৯ সালের মধ্যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ মারা যায়। অথচ শাসক গোষ্ঠীর কেউ ক্ষুধায় মারা যায়নি। কেবল মুসলমানরাই এ দুর্ভোগের শিকার হন। এই বৈষম্য স্পষ্ট করে দেয় যে কাশ্মীরি মুসলমানদের কী নির্মম অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হতো।

অনেক বছরের চেপে রাখা কষ্ট একদিন ফেটে পড়ে। ১৯৩১ সালে ঈদের দিন মহারাজার প্রশাসন ঈদের খুৎবা বন্ধ করে দেয়। এমনকি কুরআনের প্রতি অবমাননাকর আচরণ করা হয়। এই ঘটনাগুলো ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢালে। কাশ্মীরি যুবক আব্দুল কাদির এক সমাবেশে সাহস করে রাজপ্রাসাদ ধ্বংসের কথা বলেন। সাথে সাথে তাকে গ্রেপ্তার করে বিচার শুরু হয় শ্রীনগরের জেলে।

১৩ জুলাই, ১৯৩১। জেলের সামনে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয় আব্দুল কাদিরের প্রতি সমর্থন জানাতে। হঠাৎ এক যুবক নামাজের সময় আজান দেন। সাথে সাথে তাকে গুলি করে হত্যা করে রক্ষীরা। কিন্তু থেমে থাকেনি কেউ। একে একে ২২ জন যুবক আজান দিতে গিয়ে প্রাণ হারান। এই ঘটনাই কাশ্মীরের ইতিহাসে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম রক্তাক্ত অধ্যায় হয়ে রইল।

১৩ জুলাই এখন কাশ্মীরের ‘শহীদ দিবস’। এই দিন থেকেই কাশ্মীরের মানুষ তাদের অধিকার, সম্মান আর স্বাধীনতা চাওয়ার সাহস পায়। এরপর বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও সংঘর্ষ চলেছে। কিন্তু কাশ্মীরিদের সেই চাওয়া—একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বা অন্তত আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার—আজও পূর্ণ হয়নি।

কাশ্মীর শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি একটি সংগ্রামী ইতিহাসের নাম। স্বাধীনতা কোনো দয়া নয়, এটি অধিকার। আর কাশ্মীরের মানুষ সেই অধিকার চাইছে বহু যুগ ধরে। ১৯৩১ সালের সেই রক্তাক্ত দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সবসময় সহজ নয়, কিন্তু প্রয়োজনীয়।

r1 ad
top ad image