top ad image
top ad image
home iconarrow iconবিশ্ব রাজনীতি

চীনে শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘিরে বিক্ষোভ-সহিংসতা

চীনে শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘিরে বিক্ষোভ-সহিংসতা
এক কিশোর শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়েছে চীনে। ছবি: এক্সে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও থেকে

চীনের উত্তর-পশ্চিমের একটি শহরে এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনায় সহিংস বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা গেছে, শানসি প্রদেশের পুচেং শহরে কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশকে লক্ষ করে বিভিন্ন বস্তু ছুড়ে মারছে। এ সময় বিক্ষোভকারী কয়েকজনকে পুলিশের হাতে মারধরের শিকার হতে দেখা যায়।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ওই কিশোর গত ২ জানুয়ারি তার স্কুলের ছাত্রাবাসে এক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। তবে তার মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ ওঠে, ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

ওই কিশোরের মৃত্যুর পরপরই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং কয়েকদিন ধরে তা চলতে থাকে। তবে এ সপ্তাহের শুরুতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। বিবিসি এরপর থেকে পুচেংয়ে আর কোনো বিক্ষোভের প্রমাণ পায়নি।

চীনে প্রকাশ্যে বিক্ষোভ নতুন কিছু নয়। তবে ২০২২ সালে কোভিড নীতির বিরুদ্ধে হওয়া ‘হোয়াইট পেপার’ বিক্ষোভের পর থেকে কর্তৃপক্ষ এ ধরনের বিক্ষোভকে বিশেষভাবে দেখতে শুরু করেছে। কারণ এসব বিক্ষোভে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল, যা চীনে বিরল।

পুচেংয়ের বিক্ষোভ নিয়ে নীরব রয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। কর্তৃপক্ষের কাছে স্পর্শকাতর মনে হওয়া অন্য যেকোনো ঘটনার মতোই এবারও বিক্ষোভেরও ভিডিও ক্লিপ বা এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে অনেকাংশে সেন্সর করা হয়েছে। তবে চীন থেকে ফাঁস হওয়া বেশ কিছু ভিডিও এক্সে (সাবেকটুইটার) ছড়িয়ে পড়েছে।

এক্সে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলো পুচেং ভোকেশনাল এডুকেশন সেন্টারে ধারণ করা বলে নিশ্চিত করেছে বিবিসি। তবে বিক্ষোভ শুরুর আগের কোনো ভিডিও অনলাইনে পাওয়া যায়নি।

China Protest Over Student Killing 10-01-2025 (01)

বিবিসির পক্ষ থেকে পুচেং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে প্রচার বিভাগের একজন প্রতিনিধি জানান, বিক্ষোভের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এর আগে এ সপ্তাহের শুরুতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই কিশোরের পদবি ছিল ড্যাং। পুচেংয়ের এডুকেশন সেন্টারের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল সে।

বিবৃতিতে বলা হয়, মৃত্যুর আগে রাতে শিক্ষার্থীদের আড্ডার শব্দে ড্যাংয়ের ঘুম ভেঙে যায়। এ নিয়ে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়লে স্কুলের এক কর্মকর্তা সেটি মীমাংসা করে দেন। সে রাতেই ছাত্রাবাসের নিচে এক শিক্ষার্থী ড্যাংয়ের মরদেহ দেখতে পায়।

বিবৃতিতে ওই ঘটনাকে ‘স্কুলের ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, পুলিশ তদন্ত ও ময়নাতদন্ত করেছে। এ ঘটনায় কোনো ফৌজদারি মামলা হয়নি।

কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করলেও অনলাইনে অভিযোগ উঠছে, ঘটনাটির পেছনে আরও ঘটনা আছে এবং কর্তৃপক্ষ সত্য গোপন করছে। তথ্য-প্রমাণহীন একটি অভিযোগে বলা হয়েছে, ড্যাং আত্মহত্যা করেছে। কারণ তার সঙ্গে ঝগড়া করা ছেলেটি তাকে হয়রানি করেছিল।

সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া ছড়িয়ে পড়া তার পরিবারের কিছু মন্তব্যে দাবি করা হয়েছে, ড্যাংয়ের শরীরে পাওয়া আঘাতের চিহ্নের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বর্ণিত ঘটনার মিল নেই। কিশোরটির মরদেহ পরিবারের সদস্যদের দেখানোর আগে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে।

এসব অভিযোগ উঠলে পুচেংয়ের অধিবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এ ঘটনায় কয়েক শ মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের জন্য ‘বুলিং’ একটি সংবেদনশীল বিষয় হয়ে উঠেছে। এর আগেও ছাত্রদের মৃত্যুর কিছু ঘটনা বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। গত মাসে চীনের একটি আদালত সহপাঠীকে হত্যার দায়ে দুই কিশোরকে দীর্ঘ কারাদণ্ড দিয়েছে।

সোমবার এক্সে পোস্ট করা পুচেং ভোকেশনাল এডুকেশন সেন্টারের আরও কিছু ভিডিওর সত্যতা নিশ্চিত করেছে বিবিসি। ভিডিওগুলোতে সাধারণ মানুষকে ওই কিশোরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তারা স্কুলের মূল ফটকে ফুল রেখে স্কুল ভবনের ছাদ থেকে কাগজের টুকরো ফেলে রীতি অনুযায়ী শোক পালন করছিলেন।

অন্য ভিডিওগুলোতে বিক্ষোভকারীদের একটি ভবনে ঢুকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে এবং ‘আমাদের সত্য জানাও’ বলে চিৎকার করতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই তরুণ ছিল।

যাচাই করা আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, একজন স্কুল কর্মকর্তা চিৎকার করে বিক্ষোভকারীদের মুখোমুখি হলে তারা তাকে ধাক্কা দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। অন্য ভিডিওতে স্কুল প্রাঙ্গণের ভাঙচুরের শিকার অফিস ও বিক্ষোভকারীদের স্কুলের প্রবেশপথে স্থাপিত ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার দৃশ্য দেখা যায়।

আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পিছু হটতে থাকা পুলিশদের দিকে বিক্ষোভকারীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জিনিসগুলো ছুড়ে মারছে। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তারা কিছু বিক্ষোভকারীকে আটক করে লাঠি দিয়ে মারধর করছিলেন। কয়েকজন বিক্ষোভকারীর মাথা ও মুখ থেকে রক্ত ঝরতেও দেখা যায়।

এরপর কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে খুব কম তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। খবরে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে পুচেংয়ে পুলিশের উপস্থিতি অনেক বেশি বেড়েছে এবং সেখানে আর কোনো বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে জনগণকে ‘গুজব তৈরি না করা, গুজবে বিশ্বাস না করা ও গুজব না ছড়ানো’র আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

r1 ad
r1 ad
top ad image