কাশ্মীরের হামলায় ‘বেছে বেছে পুরুষদের গুলি চালানো হচ্ছিল’\n
এই পাঁচটি সিদ্ধান্তের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সিন্ধু জলচুক্তিটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এর আগে কখনো যুদ্ধের সময়ও এই চুক্তি রদ করা হয়নি। এবার চুক্তিটি স্থগিত করায় সিন্ধুসহ পাঞ্জাবের নদীগুলোর পানি পাকিস্তানে যাওয়া নিয়ে যে চুক্তি হয়েছি্ল, তা কার্যকর হবে না। এই নদীর পানি না পেলে পাকিস্তান বিপাকে পড়বে। সিন্ধু ছাড়াও বিতস্তা, চন্দ্রভাগা, ঝিলম, শতদ্রু, ইরাবতী নদীর পানি পাকিস্তানে যায়।
সাবেক পররাষ্ট্রসচিব বিবেক কাটজু ভারতীয় গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা যা প্রমাণ করবার চেষ্টা করছি, তা হলো— এই আক্রমণ ভারত বরদাশত করতে পারে না। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত আর কী ব্যবস্থা নেয়, তা দেখতে হবে। অতীতেও ভারত তা নিয়েছে। দেশের মানুষের মনোভাব পুরোপুরি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চলে গেছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা এবার ভাবতে পারে ভারত।
পহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার পরই ভারত অভিযোগ করে, এর পেছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে। বুধবারও পাকিস্তান থেকে ‘সন্ত্রাসবাদী’রা ভারতে ঢুকতে চেয়েছিল এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষে দুই ‘জঙ্গি’ নিহত হয়েছে বলে ভারত জানিয়েছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এ হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামক একটি সশস্ত্র সংগঠন এর পেছনে থাকতে পারে।
টিআরএফ পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার ছায়া সংগঠন হিসেবে পরিচিত।
কাশ্মির হামলার জের ধরে বুধবার ভারতের অনেক স্থানে পাকিস্তানের পতাকা পোড়ানো হয়। ছবি: সংগৃহীত
পহেলগামের ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা নিন্দা জানানোর পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তানও। দেশটির পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ভারতের অবৈধভাবে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মিরের অনন্তনাগ জেলায় হামলায় পর্যটকদের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ দেশটির গণমাধ্যমকে বলেন, এই হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো সম্পর্ক নেই। এগুলো সবই তাদের দেশীয় বিদ্রোহ। তাদের বিভিন্ন রাজ্যে সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ চলছে। এক-দুটো নয়, নাগাল্যান্ড থেকে কাশ্মীর, দক্ষিণ ছত্তিশগড় ও মণিপুরসহ কয়েক ডজন রাজ্যে বিদ্রোহ চলছে।
পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না জানিয়ে খাজা আসিফ বলেন, পাকিস্তান ‘সন্ত্রাসে’র পক্ষে নেই। পাকিস্তান সবসময় যেকোনো ধরনের সন্ত্রান্সের বিরুদ্ধে।
কাশ্মিরের পহেলগামে হামলার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় সেনাবাহিনী। ছবি: সংগৃহীত
ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক হাইকমিশনার আব্দুল বাসিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, আমি আত্মবিশ্বাসী যে ভারতের যেকোনো ধরনের দুঃসাহসিক কাজ ব্যর্থ করতে পাকিস্তান সবভাবে প্রস্তুত। আমার কোনো সন্দেহ নেই যে এবার পাকিস্তানের তরফে যথাযোগ্য জবাব দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটন স্পট পহেলগামে পর্যটকদের একটি গ্রুপের ওপর বন্দুকধারীরা গুলি চালায়। এতে এখন পর্যন্ত ২৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন অনেকে।
পহেলগাম এলাকাটি ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত। হামলার ঘটনা ঘটেছে বাইসরনে। এটি পহেলগাম থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পর্বতের মাঝে একটি জায়গা।
জম্ম ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ বলেছেন, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার যেসব ঘটনা সাম্প্রতিক ঘটেছে তার মধ্যেই এটিই সবচেয়ে বড় হামলা।
[তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা, ডয়েচে ভেলে বাংলা, এএনআই, দ্য হিন্দু]