প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা— বেঁকে যাওয়ার সময় বিমানের নিচে জ্বলছিল আতশবাজির মতো আলো
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে সামরিক হেলিকপ্টারের সঙ্গে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের যাত্রীবাহী জেট বিমানের ভয়াবহ সংঘর্ষ ঘটেছে। উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার দুটিই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে পোটোম্যাক নদীতে। এখন পর্যন্ত এ দুর্ঘটনায় ১৮ মরদেহ উদ্ধারের খবর মিলেছে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, দুর্ঘটনার সময় তারা বিমানটির নিচে তীব্র আলোর ঝলকানি দেখতে পেয়েছেন, যা তাদের কাছে আতশবাজির মতো মনে হচ্ছিল। ওই সময়ই বিমানটি নিচের দিকে বেঁকে গিয়ে একসময় নদীতে পড়ে যায়।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, বুধবার (২৯ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে রিগান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের রানওয়ে ৩৩-এর কাছাকাছি এ দুর্ঘটনা ঘটে। যাত্রীবাহী বিমানটিতে মোট ৬০ জন যাত্রী ও চারজন ক্রু ছিলেন। হেলিকপ্টারে ছিলেন তিনজন মার্কিন সৈন্য।
হেলিকপ্টারের সঙ্গে সংঘর্ষে বিমান দুটুকরো, এখন পর্যন্ত ১৮ মরদেহ উদ্ধার
এ দুর্ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী অরি শুলম্যান ওই সময় বিমানবন্দরের পাশেই জর্জ ওয়াশিংটন পার্কওয়েতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। বিমানবন্দরটিতে নিয়মিতই বিমান ওঠানামা দেখে থাকেন তিনি। ফলে শুরুতে তার কাছে দুর্ঘটনার সময় তেমন অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়নি। পরে আকাশে আতশবাজির মতো তীব্র আলোর ঝলকানি বা স্ফূলিঙ্গ দেখতে পেলে তার কাছে মনে হয় ভিন্ন কিছু ঘটছে।
শুলম্যান বলেন, সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। বিমানটি ঠিকঠাক এগিয়ে আসছিল। এরপর হঠাৎ দেখি, বিমানটি ডান দিকে প্রায় ৯০ ডিগ্রি কোণে কাত হয়ে গেছে। আমি বিমানের নিচের অংশ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম, যা এত অন্ধকারে দেখা যাওয়ার কথা নয়।
বিমানটির নিচে উজ্জ্বল হলুদ আলো ও সামনে থেকে পেছন পর্যন্ত স্ফূলিঙ্গ দেখতে পান শুলম্যান। তার কাছে এটি অনেকটা আতশবাজির মতো মনে হয়। তবে বিস্ফোরণের কোনো পাননি তিনি। পাশাপাশি আগুনের গোলা বা দুর্ঘটনার অন্য কোনো লক্ষণ না দেখতে পেলে তিনি রাস্তার দিকে মনোযোগী হন।
হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের চেষ্টা করছে বাহিনীগুলো। ছবি: গেটি ইমেজ
শুলম্যান বলেন, আমি ভেবেছিলাম, আমি কি ভুল দেখলাম? এত বড় দুর্ঘটনার পর কেন কিছুই দেখতে পেলাম না? কিছুক্ষণ পর সামনে এগিয়ে গেলে দেখি, চারদিকে জরুরি উদ্ধারকর্মীদের ভিড় জমে গেছে।
রিগ্যান ওয়াশিংটন বিমানবন্দরে স্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন হামাদ রাজা। তার স্ত্রী ছিলেন আমেরিকান এয়ারলাইন্সের যাত্রী। হামাদও দুর্ঘটনার সময় আকাশে তীব্র আলোকচ্ছ্বটা দেখতে পান।
সিবিএস নিউজকে হামাদ রাজা বলেন, ‘আমার স্ত্রী আমাকে টেক্সট করেছিল, সে ২০ মিনিটের মধ্যে অবতরণ করবে। এর মধ্যেই আকাশে দেখি তীব্র আলো।’ কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি বুঝতে পারেন, তার স্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে। তিনি আশা করছেন, নদী থেকে তার স্ত্রীকে উদ্ধার করা হবে।
হেলিকপ্টারের সঙ্গে বিমানের সংঘর্ষ, হতাহতের শঙ্কা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে ‘ভয়ংকর দুর্ঘটনা’ বলে অভিহিত করেছেন। জরুরি জরুরি সেবাদাতা সংস্থাগুলো দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু করায় তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের সংসদ সদস্যরাও দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। প্রয়োজনে যেকোনো সহায়তা দিতে তারা প্রস্তুত।
পোটোম্যাক নদীতে উদ্ধার অভিযান। ছবি: ইপিএ
মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানিয়েছে, দুর্ঘটনা কবলিত আমেরিকান ঈগল ফ্লাইট ৫৩৪২ কানসাসের উইচিটা থেকে রওয়ানা দিয়ে ওয়াশিংটন ডিসির পথে ছিল। পিএসএ এয়ারলাইন্স পরিচালিত সিআরজে-৭০০ মডেলের বিমান ছিল এটি। অন্যদিকে দুর্ঘটনায় জড়িত সামরিক হেলিকপ্টারটি ছিল ইউএস আর্মির ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার, যা মূলত প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল। হেলিকপ্টারটিতে কোনো উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন না জানিয়েছেন একজন কর্মকর্তা।
এফএএ ও ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি) যৌথভাবে দুর্ঘটনার তদন্ত করবে বলে জানিয়েছে। এদিকে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী রবার্ট ইসম বলেছেন, দুর্ঘটনার শিকার যাত্রীদের উদ্ধারে সম্ভাব্য সবকিছু করা হচ্ছে।