লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলে মৃত্যু বেড়ে ৭, ক্ষতিগ্রস্ত ৯ হাজারের বেশি স্থাপনা
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের ভয়াবহ দাবানলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাতজনে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেক মানুষ। দাবানলে অন্তত ৯ হাজার স্থাপনা ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছয় হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে দাবানল হলিউড হিলসসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। দাবানলের গতি ও ভয়াবহতায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সিএনএনসহ মার্কিন গণমাধ্যমগুলো এসব তথ্য দিয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার প্যালিসেড এলাকার দাবানলে দুজন ব্যক্তির মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর আগে ইটন এলাকায় আগুনে পুড়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছিল। কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
দাবানল পরিস্থিতি নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার জানান, সরকার এই দুর্যোগ মোকাবিলায় অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়েছে।
টানা তৃতীয় দিনের অভিযানে হেলিকপ্টারে করে পানি ছিটিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তবে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতিবেগের বাতাসে দাবানল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত লস অ্যাঞ্জেলেস শহর জুড়ে ৯ হাজারেরও বেশি স্থাপনা ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে লাখ লাখ ডলার দামের বিলাসবহুল বাড়িও রয়েছে। প্যারিস হিলটন, অ্যান্থনি হপকিনস ও বিলি ক্রিস্টালের মতো হলিউডের অনেক তারকা তাদের বাড়ি হারিয়েছেন এই দাবানলে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ওয়েস্ট হিলস এলাকায় নতুন করে দাবানল দেখা দিয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘কেনেথ ফায়ার’। বর্তমানে লস অ্যাঞ্জেলেস ও ভেনচুরা কাউন্টির সীমান্তে ৭৯০ একর জায়গা জুড়ে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। শুরুর দিকে দাবানল খুব দ্রুত গতিতে ছড়ালেও এখন এর বেগ কিছুটা কমে এসেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
এর আগে ‘ইটন ফায়ার’ নামের দাবানল ১৩ হাজার ৬৯০ একর জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। দাবানল এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির দমকল বাহিনীর প্রধান অ্যান্থনি ম্যারন সংবাদ সম্মেলনে জানান, আনুমানিক চার থেকে পাঁচ হাজার স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।
দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের টানা কাজ করে যেতে হচ্ছে। তাদের কমপক্ষে ১০০ পাউন্ড ওজনের সরঞ্জাম বহন করতে হচ্ছে। কিন্তু তাতেও দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার পেশাদার দমকল কর্মীদের ইউনিয়নের মুখপাত্র সিএনএনকে জানান, অনেক কর্মী টানা ৪০ থেকে ৪৮ ঘণ্টা কাজ করার পরও তাদের ফের দাবানল নিয়ন্ত্রণের কাজে পাঠানো হয়েছিল। তারা আরও ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা ডিউটিতে থাকবেন। দেশের অন্যান্য অংশ থেকে বাড়তি কর্মী না আসা পর্যন্ত তাদের বিশ্রাম দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
ইউনিয়ন প্রতিনিধি বলেন, বিভিন্ন ভবন ও গাড়িতে থাকা রাসায়নিক উপকরণ পুড়ে গিয়ে অত্যন্ত বিষাক্ত ধোঁয়া তৈরি হয়েছে। এই বৈরী পরিবেশেই কর্মীদেররা কাজ করতে হচ্ছে।
দমকল কর্মীরা আশঙ্কা করছেন, আগামী সপ্তাহে আরও প্রবল বাতাস ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজে জটিলতা বাড়তে পারে। শেরিফ রবার্ট লুনা জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে সেনাবাহিনীর (ন্যাশনাল গার্ড) সহায়তা চাওয়া হয়েছে। ইটন ও প্যালিসেড দাবানল নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে সাতটি হেলিকপ্টারে করে সেনা এনে কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে।
এদিকে দাবানল এলাকায় লুটপাটের ঘটনাও বাড়ছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের বিভিন্ন অংশে সেনা সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজেও সহায়তা করছেন। শেরিফ জানান, কিছু জায়গায় কারফিউ জারির চিন্তা চলছে।