রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তা কমে অর্ধেক\n
বাংলাদেশে ডাব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডম স্ক্যালপেল্লি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও দীর্ঘস্থায়ী মানবিক সংকট। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা সম্পূর্ণভাবে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। খাদ্য সহায়তা কমানো হলে তারা আরও গভীর সংকটে পড়বে। সে ক্ষেত্রে বেঁচে থাকার জন্য মরিয়া হয়ে তারা আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নামতে শুরু করে ২০১৭ সালের আগস্টে। ওই সময় থেকে পরের কয়েক মাসে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী প্রাণ বাঁচাতে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এরপর আরও কয়েকবার থেমে থেমে আরও কিছু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। সবশেষ গত কয়েক মাসে প্রায় নতুন এক লাখ রোহিঙ্গা এসেছে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে।
ডাব্লিউএফপিও ধারণা করছে, গত কয়েক মাসে মিয়ানমারের সংঘাত থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। পালিয়ে আসা এসব মানুষ নিরাপত্তার আশ্রয় খুঁজছে, যা এরই মধ্যে চাপে থাকা সম্পদের ওপর আরও বড় চাপ তৈরি করছে।
এ অবস্থাায় জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি এরই মধ্যে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সম্ভাব্য রেশন কমানোর বিষয়ে যোগাযোগ শুরু করেছে। এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়কে।
স্ক্যালপেল্লি বলেন, এখন আমাদের আগের চেয়ে আরও বেশি করে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো দরকার। এই পরিবারগুলোর আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ডাব্লিউএফপির খাদ্য সহায়তাই তাদের বেঁচে থাকার আশা ও হতাশার মধ্যে পার্থক্য। এই সংকট আরও বাড়তে না দেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।
এর আগে ২০২৩ সালে তহবিলের তীব্র সংকটের কারণে ডাব্লিউএফপি প্রতি মাসে রোহিঙ্গাদের জনপ্রতি রেশন ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ৮ ডলারে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়। ওই সময় রোহিঙ্গাদের খাদ্যগ্রহণের পরিমাণে ব্যাপক অবনতি ঘটে। এতে ২০১৭ সালের পর থেকে রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির মাত্রাও সর্বোচ্চ (১৫ শতাংশেরও বেশি) হারে পৌঁছায়।
নতুন তহবিল পাওয়ার পর ফের সেই রেশনের পরিমাণ বাড়িয়ে সাড়ে ১২ ডলার করা হয়। ডাব্লিউএফপি বলছে, এই পরিমাণ অর্থ একজন মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য আবশ্যক। কিন্তু তহবিল না থাকার কারণে সেই পরিমাণকে অর্ধেকেরও কমে নামিয়ে আনতে হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যেহেতু এই জনগোষ্ঠীর কোনো আইনি অবস্থান নেই, ক্যাম্পের বাইরে তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা নেই এবং টেকসই জীবিকার সুযোগও নেই, তাই রেশনের পরিমাণ কমানো হলে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
রোহিঙ্গা পরিবারগুলো বাঁচতে তখন বেপারোয়া সিদ্ধান্ত নিতে পারে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের মতো বিশেষত নারীদের শোষণ, পাচার, পতিতাবৃত্তি ও সহিংসতার উচ্চতর ঝুঁকির মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। শিশুরা স্কুল থেকে বের হয়ে শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হতে পারে। মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে।
বিশ্বজুড়ে শরণার্থী জনগোষ্ঠী সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও সাহায্যের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারাই প্রথম ঘাটতির সম্মুখীন হয় উল্লেখ করে ডাব্লিউএফপি বলছে, তহবিলের ঘাটতি ও চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য অনেক সম্প্রদায়ের বেঁচে থাকা আরও কঠিন হয়ে উঠছে।