যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে এবারও কি হস্তক্ষেপ করবেন পুতিন
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমনটা কখনো দেখা যায়নি। যে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে কমালা হ্যারিস ও ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে তা নতুন এক ইতিহাস হয়ে থাকবে। ৫ই নভেম্বর নির্বাচন। এখন পর্যন্ত জনমত জরিপ ইঙ্গিত দিচ্ছে প্রতিযোগিতা হবে সমানে সমান। খুব সামান্য ব্যবধানে নির্বাচিত হতে পারেন প্রেসিডেন্ট। এই নির্বাচনে এরই মধ্যে কয়েক কোটি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। বাকি মানুষ ৫ই নভেম্বর ভোটকেন্দ্রে গিয়ে সরাসরি ভোট দেবেন। ফল কি দাড়ায় তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে যেমন আগ্রহ, তেমনি বিশ্বজুড়ে দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। কারণ, এই নির্বাচনের ফল বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতিতে বিরাট প্রভাব ফেলবে। তাই শুধু বিশ্ববাসী নন, বিশ্বনেতারাও তৎপর। তাদেরও পক্ষ আছে। তার মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অন্যতম। তিনি আকারে ইঙ্গিতে বোঝাতে চেয়েছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী কমালা হ্যারিসকে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে পছন্দ করেন। কিন্তু প্রকাশে এমন কিছু ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে স্পষ্ট যে প্রকৃতপক্ষে তিনি ট্রাম্পের ভক্ত।
চ্যাথাম হাউসের রাশিয়া ও ইউরোশিয়া প্রোগ্রামের সহযোগী ফেলো তিমোথি অ্যাশ বলেন, নানা রকম কারণে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকে পছন্দ করেন পুতিন। কারণ, তিনি ট্রাম্পের বিষয়টি কোমলভাবে ভাবেন। নির্বাচিত হলে ইউক্রেন যুদ্ধে দেশটিকে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা কর্তন করবেন। রাশিয়ার ওপর থেকে তুলে নেবেন নিষেধাজ্ঞা। টিমোথি অ্যাশ আরও বলেন, আমার মনে হয় ট্রাম্পের দিকে তাকিয়ে পুতিন ভাবেন তারই প্রতিচ্ছবি। তারই মতো একজন কতৃত্ববাদী। ট্রাম্পকে তিনি বুঝতে পারেন বলে মনে করেন। উপরন্তু পুতিন গণতান্ত্রিক পশ্চিমা ব্যবস্থাকে ঘৃণা করেন। রাশিয়ার নেতা ভাবে এবারও ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদের মতো হবে। একই রকম ন্যাটো ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতি অবহেলা করবেন। তবে রাশিয়ান বিশ্লেষকরা মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে যিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হোন না কেন, রাশিয়ার কর্মকর্তারা মনে করেন রাশিয়ার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন হবে না।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল রাজনীতি নিয়ে নিজের চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেছেন পুতিন। সাল থেকে তাই তিনি তার বাছাই করা প্রার্থীকে সময়ে সময়ে অনুমোদন দিয়েছেন। ৬ সালের নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন পুতিন। তখন তিনি ট্রাম্প সম্পর্কে বলেন, তিনি একজন উজ্বল ও মেধাবি ব্যক্তি। এতে কোনো সন্দেহ নেই। ৬ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পুতিনকে দায়ী করে। তারা বলে, ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে ট্রাম্পকে বিজয়ী করতে যুক্তরাষ্টের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছেন পুতিন। যুক্তরাষ্ট্রে সিনেটের উভয় পক্ষের একটি রিপোর্টে দেখা যায়, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে রাশিয়া। এ বছর ৯ই জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের এক গোয়েন্দা ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে ইঙ্গিত দেন যে, ২০২৪ সালের এই নির্বাচনে রাশিয়ার পছন্দ ট্রাম্প। অফিস অফ দ্য ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের ওই কর্মকর্তা বলেন, অতীতের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় এবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না। কারণ, ইউক্রেন যুদ্ধে ডেমক্রেট সরকার পুতিনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সেপ্টেম্বরে হ্যারিস সম্পর্কে পুতিন বলেন, তার হাসি বিস্ফোরক এবং সংক্রামক। তিনি ভাল করছেন। সম্ভবত তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেবেন না। অক্টোবরে বিখ্যাত সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড তার নতুন বই ‘ওয়ার’-এ দাবি করেন, ট্রাম্প ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্টের পদ হারানোর পর পুতিনের সঙ্গে কমপক্ষে সাতবার ফোনে কথা বলেছেন। তবে এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ট্রাম্পের নির্বাচনী শিবির।
অন্যদিকে ট্রাম্প নিজে বলেছেন, বব উডওয়ার্ড হলেন একজন গল্পকার। একজন বাজে গল্পকার। তিনি যে সুনাম কুড়িয়েছিলেন, তা হারিয়েছেন। অক্টোবরের শেষের দিকে ব্রিকস সামিট শেষের দিকে পুতিন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সবকিছু করার বিষয়ে কথা বলেছেন ট্রাম্প। আমি আশা করি এ বিষয়ে তিনি আন্তরিক হবেন।