চীনের ওপর আরও ৫০% শুল্ক আরোপ করেই ছাড়লেন ট্রাম্প\n
গত ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানিতে নতুন করে শুল্কহার ঘোষণা করেন ট্রাম্প। সে দিন চীনের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয় ৩৪ শতাংশ। এর আগে মার্চেই চীনা পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় চীনের ওপর শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৪ শতাংশ। এই শুল্কহার ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকরের ঘোষণা দেন ট্রাম্প।
একদিন পরই ৪ এপ্রিল চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, তারা ১০ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাঁচামালের ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণও করবে। এ ছাড়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলাও করে দেশটি।
ট্রাম্প ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন, যদি কোনো দেশ আরোপ করা নতুন শুল্কহারের পালটা প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করে, তাহলে তিনি আরও বেশি শুল্ক আরোপ করবেন। সে অনুযায়ীই চীনের পালটা শুল্ক আরোপের ঘোষণায় চীনের ওপর আরও ৫০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক যোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
চীনের ওপর আরোপ করা ১০৪ শতাংশ শুল্ক প্রসঙ্গে ইউরেশিয়া গ্রুপ কনসালট্যান্সির ড্যান ওয়াং বলেন, বাস্তবতা হলো— ৩৫ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করা হলে চীনের ব্যবসাগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পণ্য রপ্তানি করে কোনো মুনাফাই করতে পারবে না।
৩৫ শতাংশের বেশি শুল্ককে ‘কেবল প্রতীকী’ হিসেবে ধরা যায় বলে অভিমত ড্যানের। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যে যদি চীনের প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে দেশটির বার্ষিক প্রায় পাঁচ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হবে।
ড্যান ওয়াং আরও বলেন, কোভিডের পর থেকে রপ্তানিই ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। সুতরাং, রপ্তানি কমে গেলে চীনের প্রবৃদ্ধিতে ধাক্কা লাগবে।
ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান কেসিএম ট্রেডের টিম ওয়াটারার বলেন, যেহেতু চীনের অর্থনীতি রপ্তানিনির্ভর, তাই এই ১০৪ শতাংশ শুল্ক চীনের জন্য দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে না।
ওয়াটারার মনে করেন, চীন স্বল্পমেয়াদে এই চাপ সামলাতে পারবে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে হলে তাদের অর্থনীতিকে পুনর্গঠন করতে হবে, অর্থনীতির ভারসাম্য আনতে হবে।
অক্সফোর্ড ইকোনমিক্স কোম্পানির প্রধান অর্থনীতিবিদ লুইস লু বিবিসিকে বলেন, চীনাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ ও পালটা প্রতিশোধের প্রতিক্রিয়াতেই পরিস্থিতি এই পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক এই অর্থনীতিবিদ বলেছেন, চীনের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপগুলো আনুপাতিক হতে পারে। তবে এটাও নির্দেশ করে যে বেইজিং বাণিজ্য আলোচনার দরজা খোলা রেখে চলেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেও বাণিজ্য নিয়ে যুদ্ধে জড়ায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। এবার ফের দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছেই।
ট্রাম্পের নতুন শুল্কহার ঘোষণায় অবশ্য কেবল চীন নয়, গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতেই অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বের বড় বড় কয়েকটি পুঁজিবাজারে দরপতন শঙ্কা তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ছাড়াও এশিয়ার পুঁজিবাজারেও ব্যাপক দরপতন দেখা দেয়। এর মধ্যে হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক একদিনেই ১৩ শতাংশ পড়ে গেছে, যা ১৯৯৭ সালের পর সবচেয়ে বড় পতন।
বিবিসি অবলম্বনে