বাংলাদেশের রাজনীতিতে ২৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা নিয়ে মুখ খুললেন ট্রাম্প

বাংলাদেশের ‘রাজনৈতিক পরিমণ্ডল’ শক্তিশালী করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের একটি সংস্থাকে ২৯ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা) অর্থ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই সংস্থায় মাত্র দুজন ব্যক্তি কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের গভর্নরদের নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সহায়তার কিছু উদাহরণ তুলে ধরেন। এ সময়ই বাংলাদেশকে ২৯ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রসঙ্গ টানেন তিনি। ভারতেও নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ২১ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা জানান তিনি।
ফেব্রুয়ারিতেই ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন দপ্তর ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডিওজিই) জানিয়েছিল, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল শক্তিশালী করতে ইউএসএইডের মাধ্যমে ২৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার কথা ছিল, যা বাতিল করা হয়েছে।
এবার ট্রাম্প নিজেই মুখ খুললেন এই আর্থিক সহায়তা নিয়ে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিমণ্ডল শক্তিশালী করার জন্য ২৯ মিলিয়ন ডলার গেছে একটি সংস্থার কাছে, যার নাম কেউ কখনো শোনেনি।
২৯ মিলিয়ন ডলার সংখ্যাটি উচ্চারণ করে বিস্ময় প্রকাশ করেন ট্রাম্প। বলেন, তারা এই অর্থের চেক পেয়েছে। ভাবা যায়! আপনার হয়তো ছোট একটি সংস্থা আছে। আপনি এখানে ১০ হাজার ডলার, ওখান থেকে ১০ হাজার ডলার সংগ্রহ করেন। আর তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে ২৯ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে!
ট্রাম্প আরও বলেন, ওই সংস্থায় মাত্র দুজন কাজ করেন। আমি মনে করি তারা খুব খুশি। তারা খুবই ধনী। কয়েকদিন পরই হয়তো দেখা যাবে বড় কোনো ম্যাগাজিনে তাদের ছবি প্রকাশ হবে মহান ব্যক্তি হিসেবে।
ট্রাম্প তার বক্তব্যে ওই সংস্থার নাম বা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওই দুজনের নাম উল্লেখ করেননি। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকেও এ ধরনের কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
এদিকে ভারতকে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য ২১ মিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রসঙ্গেও কথা বলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমার বন্ধু প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে যাচ্ছে ২১ মিলিয়ন ডলার, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনার জন্য। আমরা ভারতকে এ জন্য ২১ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছি। আমাদের কী হবে? আমিও ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি চাই!
২৯ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তার বিষয়টি গত কয়েকদিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে। ইউএসএইডের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নানা সময়ে বিভিন্ন দেশকে নানা ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরই বিপুল পরিমাণ অর্থ সহায়তার বরাদ্দ ছেঁটে ফেলেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলকে শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের ২৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের বক্তব্যের পর ফের বিষয়টি আলোচনায় উঠে এলো।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থ সহায়তার সঙ্গে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটরিবর্তনের সম্পর্কও মেলানোর চেষ্টা করছেন অনেকে। ওই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগপন্থিদের দাবি, গণঅভ্যুত্থানের পেছনে মার্কিন অর্থ ও সহায়তা ছিল।
ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এনডিটিভি প্রফিটেরে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) প্রতিবেদন থেকে বোঝা যায় যে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যক্তরাষ্ট্রের একটি অংশ ফাঁদ পেতেছিল।
মার্কিন ‘ডিপ স্টেটে’র এমন ভূমিকা নিয়েও বিস্তর আলোচনা হয়েছে। সম্প্রতি ট্রাম্পকেও এ বিষয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেলে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসে এমন প্রসঙ্গ। জবাবে ট্রাম্প অবশ্য সরাসরিই বলেন, বাংলাদেশের ক্ষমতার পালাবদলে ডিপ স্টেটের কোনো ভূমিকা ছিল না।