top ad image
top ad image
home iconarrow iconবিশ্ব রাজনীতি

অর্ধ লাখ প্রাণ ঝরিয়ে যুদ্ধবিরতি আসছে গাজায়

অর্ধ লাখ প্রাণ ঝরিয়ে যুদ্ধবিরতি আসছে গাজায়
গত ২৯ ডিসেম্বর ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজার বেইত লাহিয়া এলাকার কামাল আদওয়ান হাসপাতাল ভবন পরিণত ধ্বংসস্তূপে। সেই ধ্বংসস্তূপেও কিছু পাওয়া যায় কি না, সেটিই দেখছেন দুই ফিলিস্তিনি নারী। ছবি: আনাদোলু এজেন্সি

মাসের পর মাস ধরে দফায় দফায় আলোচনার পর অবশেষে ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল ও হামাস। এর আগেই দীর্ঘ প্রায় ১৫ মাসের যুদ্ধে প্রাণহানি ঘটেছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা জানিয়ছেন, বুধবার (১৫ জানুয়ারি) যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত চুক্তিতে ইসরায়েল ও হামাস ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে আগামী রোববার (১৯ জানুয়ারি) থেকে।

বার্তা সংস্থা এএফপি ও রয়টার্সের খবরে বলা হয়, যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে দুপক্ষ সম্মত হওয়ায় গাজায় সংঘাত বন্ধ হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। পাশাপাশি হামাসের হাতে বন্দি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির পথও সুগম হবে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলে হামলা চালালে প্রায় ১২ শ মানুষ নিহত হন। ইসরায়েল থেকে জিম্মি করা হয় ২৪১ জনকে, যাদের মধ্যে ৯৪ জন এখনো গাজায় বন্দি। হামাসের ওই হামলার পর থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ওই সময় থেকে গত প্রায় ১৫ মাসে হামলা শিকার হয়েছে অন্তত ৪৬ হাজার ৭০৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

ওই যুদ্ধ শুরুর পর প্রথম দিকে সাত দিনের একটি যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। এরপর থেকে টানা যুদ্ধে দিন দিন আরও বেশি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছে গাজা। এবারে দুপক্ষের সম্মতিতে কতদিন যুদ্ধবিরতি চলবে, সে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো জানানো হয়নি। তবে চুক্তিটি বিষয়ে অবগত এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, চুক্তিতে ছয় সপ্তাহের একটি প্রাথমিক যুদ্ধবিরতির সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

যুদ্ধবিরতির চুক্তি বিষয়ে ওয়াকিবহাল একটি সূত্র জানিয়েছে, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল-থানি নিজ কার্যালয়ে আলাদা করে হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এরপর দুপক্ষ যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে একমত হয়। মোসাদের পরিচালক ডেভিড বার্নিয়া, শিনবেটের পরিচালক রন বারসহ দুপক্ষের শীর্ষ নেতৃত্ব আলোচনায় অংশ নেন।

Gaza CeaseFire News Photo 15-01-2025 (1)

যুদ্ধবিরতির খবর ছড়িয়ে পড়লে গাজার সড়কে ফিলিস্তিনি নাগরিক ও সাংবাদিকদের উল্লাস। ছবি: রয়টার্স

যেসব শর্ত মেনে চুক্তিতে ইসরায়েল ও হামাস যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে তাতে ছয়টি ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ৩৩ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেবে হামাস। তাদের মধ্যে রয়েছেন নারী, শিশু ও পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষরা। এর বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিরা মুক্তি পাবেন।

প্রথম ধাপের ১৬ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের কার্যক্রম শুরু হবে। এই ধাপে হামাসের হাতে জিম্মি বাকিদের মুক্তি দেওয়া হবে। এ পর্যায়ে শুরু হবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি। গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীও প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।

এরপর তৃতীয় ধাপে হামাসের হাতে থাকা নিহত জিম্মিদের মরদেহ হস্তান্তর করা হবে ইসরায়েলের কাছে। এ ধাপে মিশর, কাতার ও জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গাজা পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। যুদ্ধবিরতির শর্তের বাকি ধাপগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও গাজায় যুদ্ধবিরতির কথা জানিয়েছেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই চুক্তি গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করবে। ফিলিস্তিনের বেসামরিক নাগরিকদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা বাড়িয়ে দেবে। ১৫ মাসেরও বেশি সময় বন্দি থাকার পর জিম্মিদের সঙ্গে তাদের পরিবারের পুনর্মিলন ঘটাবে।’

২০২৪ সালের ৩১ মে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এই পরিকল্পনার সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তুলে ধরেছিলেন বলে জানান বাইডেন। বলেন, নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে এই রূপরেখা অনুমোদন করেছিল। এই চুক্তিকে আমেরিকার দৃঢ় ও কষ্টসাধ্য কূটনীতিরও ফলাফল বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

এদিকে যুদ্ধবিরতির খবরে উল্লাস ছড়িয়ে পড়েছে গাজায়। মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কে নেমে আসতে দেখো গেছে মানুষদের। তারা উল্লাস করছিলেন। তবে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আগেই ইসরায়েল আরও তীব্র হামলা চালাতে পারে বলেও অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

r1 ad
r1 ad
top ad image