বীর মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা: অনলাইনে সমালোচনার ঝড়
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ ঘটনায় তীব্র সমালোচনায় মুখর হয়েছেন নেটিজেনরা। ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্টে তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন তরুণ আব্দুল হাই কানুকে ধরে আনেন। তার পরনে ছিল পাঞ্জাবি ও লাল কটি, গলায় জুতার মালা। ভিডিওতে একজনকে বলতে শোনা যায়, আব্দুল হাই যেন বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। আরেকজন তাকে কুমিল্লা থেকেই বের হয়ে যেতে বলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধার আব্দুল হাই কানু চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়ন ইউনিয়নের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এ ঘটনার উল্লেখ করে অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট রাতিন রাহমান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে (বীর প্রতীক) বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে এভাবেই সর্বোচ্চ শ্রদ্ধায় সম্মানিত করা হয়। মালাটা পরা অবস্থায় তাকে এলাকাবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। এই মুক্তিযোদ্ধা হাত তুলে ক্ষমাপ্রার্থনা করার পরেও তাকে কুমিল্লা থেকে চিরতরে বের করে দেবার প্রতিজ্ঞা জানানো হয়...’
একটি জাতীয় দৈনিকের এ সংক্রান্ত খবর শেয়ার করে মনজুরুল আহসান নামে একজন লিখেছেন, ‘মেটিকুলাসলি ডিজাইনড অ্যাট্রোসিটি অন দ্য রাইজ!’
মো. ফাহাদ হোসেন লিখেছেন, ‘খেতাবপ্রাপ্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা, লজ্জিত বাংলাদেশ। তীব্র ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানাই।’
এ ঘটনায় এরই মধ্যে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসউইং। এক বার্তায় বলা হয়েছে, এ ঘটনার তদন্ত করতে এরই মধ্যে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতিতেই আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে অনুরোধ করেছে প্রেসউইং।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে হেনস্তার ঘটনাটি ঘটে শনিবার সকালে। তিনি বাজার করতে বের হলে স্থানীয় কয়েকজন তাকে ধরে কুলিয়ারা হাই স্কুলের সামনে নিয়ে যান। সেখানে তার গলায় জুতার মালা পরিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই আকুতি জানিয়ে বলেন, তিনি বাড়ি থেকে বের হবেন না। এ সময় সেখানে উপস্থিত মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি বলে ওঠেন, ‘আমরা এত বছর বাড়িতে থাকতে পেরেছি?’ আরেক জন বলেন, ‘আপনি পুরো গ্রামের মানুষের কাছে মাফ চাইতে পারবেন?’ এ সময় আব্দুল হাই হাত জোড় করে ক্ষমা চাইলেও তাকে এলাকা ছাড়তে বলা হয়।
এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে কাজ চলছে জানিয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম আক্তারুজ্জামান বলেন, ঘটনায় জড়িতদের কেউ ঢাকায়, কেউ গাজীপুরে থাকেন বলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পেরেছে। আমরা তাদের শনাক্ত করতে কাজ করছি।