top ad image
top ad image
home iconarrow iconখবরাখবর

শেখ হাসিনা লুটপাট করেছে, ভুক্তভোগী ছিলেন আপনারা: ইউনূস

শেখ হাসিনা লুটপাট করেছে, ভুক্তভোগী ছিলেন আপনারা: ইউনূস

দেড় দশকের শাসনামলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে লুটপাট চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বলেছেন, এই লুটপাটের ফলাফল ভোগ করতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। এখন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার কাজ করছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, গত ১৬ বছরে শেখ হাসিনা যে ভয়াবহ লুটপাট কায়েম করেছিল, আপনারা সেটার ভুক্তভোগী ছিলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে তারা পালিয়ে যাওয়ার সময় এক লণ্ডভণ্ড অর্থনীতি রেখে গেছে। এ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার ভাষণটি সরাসরি সম্প্রচার করছে।

ভাষণে সরকারের চেষ্টায় বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকে ক্রমোন্নতির তথ্য তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। বলেন, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরেছে। ক্রমান্বয়ে অর্থনীতির অন্যান্য সূচকগুলো ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করছে। এ সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৩২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে, যা ২২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। আগামী জুন মাসের মধ্যে এটি ৮ শতাংশের নিচে নেমে আসবে বলে আশা করছি।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহে ব্যাপক ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকায় প্রবাসীদের ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। প্রবাসীরা যেন ভোগান্তির শিকার না হন, দূতাবাস যেন ঠিকমতো কাজ করে, এটি নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রবাসীরা যেন জাতীয় নির্বাচনে ভোটও দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের চেষ্টায় ব্যাংকিং খাতে সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরেছে এবং একে সরকারের বড় সাফল্য হিসেবে অভিহিত করেছেন অধ্যাপক ইউনূস। বলেন, পলাতক সরকারের আমলে চর দখলের মতো দেশের ব্যাংকগুলো দখল করে নেওয়া হয়েছিল। আমানতকারীর টাকাকে তারা নিজেদের ব্যক্তিগত টাকায় রূপান্তরিত করে ফেলেছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম কাজ ছিল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আস্থা ফিরিয়ে আনা, আমানতকারীর স্বার্থ রক্ষা করে নিয়ম শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা, হিসাবপত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা স্থাপন করা। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আস্থা প্রতিষ্ঠা করা গেছে। ফলে অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা ফিরেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের অর্জনগুলোর মধ্যে এটা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

গত সরকারের ১৫ বছরে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অর্থ পাচারের একটি ঘটনা তুলে ধরেন। অভিনব এ পদ্ধিতিতে বিদেশে অধ্যয়নরত সন্তানের কাছে এক ব্যক্তি টাকা পাঠানোর নামে তিন মাসের খরচ বাবদ অফিশিয়াল ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠিয়েছেন তিন কোটি ৩৩ লাখ ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পাচারের এর চাইতে বেশি তাক লাগানো পন্থা আর কী আছে! তার কোনো সীমা আছে বলে আমার মনে হয় না। আইন, নিয়মনীতির জায়গায় যখন হরিলুট প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এমন সবকিছুই সম্ভব। এই অর্থ পাচারকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।

বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা সরকারের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছে বলে ভাষণে উল্লেখ করেন অধ্যাপক ইউনূস। বলেন, তারা বাংলাদেশের বর্তমান ব্যবস্থায় বিনিয়োগের বিষয়ে খুবই আগ্রহী। আশা করছি, দ্রুততম সময়ে দেশে নতুন নতুন বিদেশি বিনিয়োগ আপনারা দেখতে পাবেন।

সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশে রপ্তানি ১৩ শতাংশ বেড়েছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পৃথিবীর সব সরকার বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বলেও জানান তিনি। অনেক দেশ বাংলাদেশে শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে আগ্রহের কথা জানিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, এসবের মাধ্যমে দেশ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে।

r1 ad
r1 ad
top ad image