ধর্ষণ-নিপীড়ন-সহিংসতার বিরুদ্ধে সংসদ ভবনের সামনে সমাবেশ\n
মানববন্ধনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের এই কলঙ্কজনক চিত্র দেখে আমরা ক্ষুব্ধ, ব্যথিত। আমরা এই ভয়াবহতার প্রতিকার চাই। অত্যন্ত লজ্জার সঙ্গে বলতে হচ্ছে, ৫৪ বছরের স্বাধীনতায় যতটুকু দেশ পেয়েছি তার সবটুকুই ভোগ করছে পুরুষরা, বাংলাদেশের নারীরা বাস্তবে স্বাধীনতা থেকে এখনও বঞ্চিত।
তিনি বলেন এমনকি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সূত্র ধরে যে ‘নতুন বাংলাদেশে’র সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, সেখানেও প্রতি পদে নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বৈষম্যবিরোধী চেতনার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। ধর্ষণ ও নারী অধিকার লঙ্ঘনের দ্রুত বিচার ও এ জঘন্য অপরাধ প্রতিরোধের লক্ষ্যে সরকারের আইনি সংস্কারের উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে এই প্রক্রিয়ায় সকল অংশীজনকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি সুপারিশের তীব্র নিন্দা জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এর মাধ্যমে আসলে ডিএমপি কমিশনার ধর্ষকের পক্ষ নিয়েছেন এবং ধর্ষককে সুরক্ষার উপায় বের করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন, যা অগ্রহণযোগ্য। অবিলম্বে তার এই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। গণমাধ্যমকে পুলিশের ন্যাক্কারজনক ভাষ্য প্রত্যাখ্যান এবং ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের সংবাদ জোরালোভাবে প্রচারের আহ্বান জানাই, যা এ ঘৃণ্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য অপরিহার্য।
‘অপরাধ মানে অপরাধ। এখানে উটপাখির মতো কোনো রাখঢাকের সুযোগ নেই। অন্যদিকে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের সহনশীলতার ঘাটতি এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ কর্তৃত্ববাদী চর্চার প্রতিফলন। পুলিশকে এ পথ পরিহার করতে হবে,’— বলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি আরও বলেন, যে সব রাজনৈতিক পক্ষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন বলে দাবি করছেন এবং যারা নির্বাচনে বিজয়ী হবেন বা জনসমর্থন চাইবেন বলে ভাবছেন, তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান— নারীর অধিকারের প্রশ্নে আপনাদের অবস্থান পরিস্কার করুন। বিশেষ করে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান— বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনা ধারণ করার কথা বলবেন, আবার ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও ধর্মান্ধতার ওপর ভিত্তি করে নারীর ওপর বৈষম্য চাপিয়ে দিবেন, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
ঢাকায় মানববন্ধনে ধর্ষণসহ নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে টিআইবির ধারণাপত্র পাঠ করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের অ্যাসিট্যান্ট কোঅর্ডিনেটর সাইমুম মৌসুমী বৃষ্টি। ধারণাপত্রে সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের বিবেচনার জন্য ১১ দফা সুপারিশ করা হয়।
এগুলোর মধ্যে অন্যতম— নারী ও শিশু ধর্ষণসহ সব ধরনের যৌন নির্যাতন, সহিংসতা ও বৈষম্য প্রতিহত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, অপরাধে জড়িতদের দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করা ও অপরাধের শিকার পরিবারকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান; সব ক্ষেত্রে ও পর্যায়ে নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন সংস্কার ও বিদ্যমান আইনগুলোর কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
মানববন্ধনে টিআইবির আহ্বানে একাত্মতা প্রকাশ করে বিভিন্ন মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠন অংশগ্রহণ করে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, নাগরিক উদ্যোগ, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), নারীপক্ষ এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজসহ (বিলস) বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা মানববন্ধনে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিজেদের দৃঢ় অবস্থানের কথা জানান।
অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, স্বাধীনতার এত বছর পরও আমরা নারীদের জন্য একটি সুরক্ষিত সমাজ গড়ে তুলতে পারিনি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। নারী নির্যাতনের প্রতিকার নিশ্চিত করতে হলে আমাদের বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে এবং দ্রুততম সময়ে অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের মহুয়া নিজাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে, তরুণদের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দল এসেছে। কিন্তু নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতার চিত্র একই রকম রয়ে গেছে।
ব্লাস্টের দীপা মালাকার বলেন, নারী নির্যাতনের ঘটনার পরও দ্রুত বিচার ও আইন প্রয়োগে ধীরগতি লক্ষ্যণীয়। বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।