top ad image
top ad image
home iconarrow iconমতামত

আন্দোলনে বিপর্যস্ত ঢাকার জনজীবন

আন্দোলনে বিপর্যস্ত ঢাকার জনজীবন
রোববার রাজধানীর শিশুমেলা মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনে আহতরা। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকার সড়কগুলো এমনিতেই যানজটপ্রবণ। তার ওপর একের পর এক আন্দোলন-অবরোধে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ নানা দাবিতে আন্দোলনে নামছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, রাজনৈতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন গোষ্ঠী তাদের দাবি আদায়ের জন্য সড়কে নেমে আসায় শহর কার্যত অচল হয়ে পড়ছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ছয় মাসে অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৩৬টি আন্দোলন সামলাতে হয়েছে। এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। সরকার কিছু ক্ষেত্রে আশ্বাস দিলেও বেশিরভাগ দাবি উপেক্ষিত থাকছে। ফলে আন্দোলন থামার বদলে আরও তীব্র হচ্ছে।

আরও পড়ুন-

তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ

গত কয়েক দিনে রাজধানীতে অন্তত ২০টি বড় ধরনের বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সবশেষ গতকাল রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে পাঁচ-ছয়টি পৃথক দাবিতে আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নামেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আশ্বাস পেলেও এবার তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে বিক্ষোভ-অনশন করছেন। তারা মহাখালী, গুলশান ও বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ কারলে তীব্র যানজট দেখা দেয়।

Job-Reclaim-By-Ex-Police-02-02-2025

চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে রোববার হাইকোর্ট এলাকায় আন্দোলন করেন আওয়ামী লীগের শাসনামলে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা। ছবি: ফোকাস বাংলা

উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দাবিতে টানা দুই দিন বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেছেন জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনে আহতরা। শনিবার রাতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের সামনে অবরোধের পর রোববার সকালে তারা অবরোধ করেন শিশুমেলা মোড়। এতে শ্যামলী-আগারগাঁও সড়ক ছাড়াও মিরপুর রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ওই সড়কের যাত্রী এম নুরুল আমিন গণমাধ্যমে বলেন, প্রায় আড়াই ঘণ্টা শিশুমেলা এলাকায় আটকে ছিলেন। এরপর মতিঝিল পৌঁছাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত অলিগলি হয়ে মিরপুরে নিজ বাসায় ফিরে গেছেন।

আরও পড়ুন-

জুলাই আন্দোলনে আহতদের শিশুমেলা মোড় অবরোধ, শ্যামলী ঘিরে স্থবির সড়ক

দিনভর বিক্ষোভ করেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে আহতরা সন্ধ্যার পর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার পথে রওয়ানা দেন। পুলিশের বাধার মুখে তারা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। মধ্যরাত পেরিয়েও তারা সেখানেই বিক্ষোভ করছিলেন।

এদিকে চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা হাইকোর্ট মাজার চত্বরে বিক্ষোভ করেন। তাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণে তারা চাকরি হারিয়েছেন। এখন সে চাকরি ফিরে পেতে চান তারা।

আবার রোববার বিকেলেই ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডে’ জড়িতদের ‘সেফ এক্সিট’ দেওয়ার প্রতিবাদ ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে ইনকিলাব মঞ্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে মিছিল বের করে, যা হাইকোর্ট মাজার গেটে আটকে দেওয়া হয়।

Titumir-College-Road-Blockade-02-02-2025

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবিতে সরকারি তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীরা রোববার সড়ক অবরোধ করেন। ছবি: সংগৃহীত

এ ছাড়াও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ছিল বেশ কয়েকটি কর্মসূচি। কেবল গতকাল নয়, প্রেসক্লাব এলাকায় প্রতিদিনই বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলন চলছে। এতে যানজটে তোপখানা সড়ক স্থবির হয়ে যাওয়া এখন নিয়মিত চিত্র।

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে এভাবে একের পর এক অবরোধ কর্মসূচির কারণে সাধারণ মানুষকে পড়তে হচ্ছে অসহনীয় দুর্ভোগে। কর্মজীবীরা সময়মতো অফিসে পৌঁছাতে পারছেন না, ব্যাহত হচ্ছে রোগী পরিবহন। নাগরিকদের ক্ষোভও বাড়ছে। অনেকে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন দীর্ঘ পথ। ঢাকা শহরে ফুটপাতের যে দশা, সেখানে হাঁটার অভিজ্ঞতা কতটুকু সুখকর, তা নিশ্চয় বলার অপেক্ষা রাখে না।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দাবি-দাওয়া আদায় নিয়ে চলছে এমন অরাজক অবস্থা। এর পরিমাণ ও প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। তবে এ কথাও সত্য, গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিভিন্ন পেশাজীবীদের অনেকেই বঞ্চিত হয়েছেন। এখন রাস্তায় নামলে সরকার কিছু বলবে না, বরং দাবি পূরণের সুযোগ থাকবে— এমন আশাতেই অনেকে রাস্তায় নামতে আগ্রহী হচ্ছেন।

আরও পড়ুন-

যমুনায় যেতে পুলিশের বাধা, ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে আহতরা

আবার দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে সব দাবি বাস্তবায়নযোগ্যও নয়। তবে সংকট নিরসনে কার্যকর আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা জরুরি। সরকার যদি দ্রুত সিদ্ধান্ত না নেয়, তবে আন্দোলন-অবরোধ ও যানজটের এই দুষ্টচক্র চলতেই থাকবে। এতে রাজধানীবাসীকেও প্রতিদিন নতুন ভোগান্তির শিকার হতে হবে। একটি শহরে নাগরিকরা এত যন্ত্রণার ভেতর আর থাকতে পারে না।

যারা আন্দোলন করছেন, তারা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করুন। কথায় কথায় রাস্তায় নেমে আসবেন না। কারণ আপনার দাবির কারণে অন্যকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আর যারা সরকারে আছেন, তারাও এসব বিষয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে উদ্যোগী হোন। রাস্তায় নামার আগেই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করুন। যুক্তি থাকলে দাবি মেনে নিন, অযৌক্তিক হলে বুঝিয়ে-শুনিয়ে ফিরিয়ে দিন। কিন্তু রাস্তায় নামার পথ বন্ধ করুন। দিনের পর দিন এ অবস্থা আর চলতে পারে না।

r1 ad
r1 ad
top ad image